সপ্তাহ জুড়ে নজির ভাঙা-গড়ার কাজে ব্যস্ত ছিল দুই সূচক। এক দিকে লগ্নি প্রবাহ ও অন্য দিকে ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা আশা, শক্তিশালী বিশ্ব বাজার সূচকের স্বাভাবিক সংশোধনও হতে দিচ্ছে না। সপ্তাহের শেষ তিন দিনে বাজার এমন কিছু খবর পেয়েছে, ছোট থেকে মাঝারি মেয়াদে যেগুলির ভাল রকম প্রভাব পড়বে। সব কিছু দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।
শুক্রবার প্রকাশিত হয় নভেম্বরের শিল্প বৃদ্ধি সংক্রান্ত তথ্য, যা বেশ উৎসাহজনক। ওই মাসে শিল্পোৎপাদন বেড়েছে ৮.৪%, আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ৫.১%। পাশাপাশি খবর আসে, ডিসেম্বরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ৫.২১%, যা গত ১৭ মাসে সব থেকে বেশি। নভেম্বরে তা ছিল ৪.৮৮%। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এর অন্যতম প্রধান কারণ, যা ভাবাচ্ছে জনতার অধিকাংশকে। শীতে সাধারণত মাছ, আনাজ, ফল ও অন্যান্য পণ্যের দাম কমে থাকে। ভাল বর্ষা সত্ত্বেও এই মূল্যবৃদ্ধি কিন্তু খুব উদ্বেগের কারণ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এখনই যদি এই হয়, তবে মাস চার-পাঁচ পরে দাম কোন দিকে যাবে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধি শিল্পের কাছেও শুভ নয়। এর জেরে ঋণে সুদ কমার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসবে। পড়তে পারে বন্ডের দামও।
তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ফল প্রকাশের মরসুম শুরু হয়েছে গত সপ্তাহে। শুরুতেই আশা জাগিয়েছে টিসিএস ও ইনফোসিস। ১,০০০ কোটি টাকার বেশি আয় বাড়লেও টিসিএসের লাভ কমেছে ২৪৬ কোটি। তবে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশার কথা শুনিয়েছে টাটা গোষ্ঠীর সংস্থাটি। সংস্থা আমেরিকায় ২০০ কোটি ডলার (১৩,০০০ কোটি টাকা) মূল্যের এক বড় বরাত পাওয়ার খবরও জানিয়েছে। পাশাপাশি আশার তুলনায় ভাল ফলাফল প্রকাশ করেছে ইনফোসিস। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে নিট মুনাফা ৩৮% বেড়ে হয়েছে ৫,১২৯ কোটি টাকা। আয়ও বেড়ে এখন ১৭,৮০০ কোটি ছুঁইছুঁই। ২৫% লাভ বাড়ার খবর দিয়ে ব্যাঙ্কিং শিল্পে প্রথম ফলাফল প্রকাশ করেছে ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্ক। ফল ভাল করেছে শ্রী সিমেন্টও। আয় ও লাভ দুই-ই বেড়েছে। চলতি সপ্তাহে হাতে আসবে আরও বেশ কিছু ফলাফল। উন্নতির ধারা বজায় থাকলে তা ভাল শক্তি জোগাবে বাজারকে।
এপ্রিল-ডিসেম্বরে প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ ১৮.২% বেড়ে ছুঁয়েছে ৬.৫৬ লক্ষ কোটি টাকা। কেন্দ্রের জন্য যা ভাল খবর। জানুয়ারি-ডিসেম্বরে গাড়ি বিক্রি ৮.৮৫% বেড়ে পৌঁছেছে ৩২.২০ লক্ষে। এটি একটি রেকর্ড। বাণিজ্যিক যানেরও বিক্রি বেড়েছে ভাল হারে। এই সব তথ্য ভাল সময়েরই ইঙ্গিত দেয়। ভারতের বৃদ্ধি নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্কও, যদিও আগামী এক দশকে তা গড়ে ৭% ছাড়াবে না বলে মনে করছে তারা।
বছরের প্রথম দিনেই ৮% সরকারি বন্ড বিক্রি বন্ধ করলেও, পরে ৭.৭৫% সুদযুক্ত নতুন বন্ড এনেছে কেন্দ্র। ব্যাঙ্কে সুদ কমায় প্রকল্পটির আকর্ষণ বজায় থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশদ তথ্য দেওয়া হল সঙ্গের সারণিতে।