প্রকল্পে প্রাপ্য পেতেই বছর পার রাজ্যে

লাল ফিতের ফাঁসে বন্দি শিল্পের সুবিধা

২০১৩ সালের সুবিধা প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের অগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু তার পরে বছর গড়াতে চললেও নতুন প্রকল্প আসেনি। অভিযোগ, এখনও তা ফাইলবন্দি। সরকারি সূত্রের খবর, প্রকল্প তৈরি।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯ ০৬:১৯
Share:

শিল্পের জন্য আর্থিক সুবিধা প্রকল্পের (ইনসেন্টিভ স্কিম) মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে প্রায় এক বছর আগে। কিন্তু নতুন করে তার ঘোষণা আর হয়নি। ফলে লগ্নি করেও রাজ্যের ঘর থেকে ওই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারছে না বিভিন্ন সংস্থা। কখনও তার প্রথম ধাপেই হোঁচট খেতে হচ্ছে। কখনও বা শেষ ধাপে চূড়ান্ত শংসাপত্র পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনে কেটে যাচ্ছে বছর। শিল্পমহলের অভিযোগ, বিনিয়োগের সব শর্ত পূরণ করেও প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না বহু লগ্নিকারী। আটকে রয়েছে প্রকল্প থাকাকালীন সময়ের বকেয়া টাকাও।

Advertisement

২০১৩ সালের সুবিধা প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের অগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু তার পরে বছর গড়াতে চললেও নতুন প্রকল্প আসেনি। অভিযোগ, এখনও তা ফাইলবন্দি। সরকারি সূত্রের খবর, প্রকল্প তৈরি। তা সত্ত্বেও কেন তা চালু করা যাচ্ছে না, তার ব্যাখ্যা শিল্প দফতরের কাছে নেই। ফলে বিনিয়োগ করেও প্রকল্পে নাম তুলতে পারছেন না লগ্নিকারীরা। তাঁদের জানানো হচ্ছে, আধিকারিকদের কাছেও এ নিয়ে কোনও তথ্য নেই। কবে নতুন প্রকল্প চালু হতে পারে? এর উত্তর পেতে চেষ্টা করেও ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র ও শিল্পসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। এসএমএসের উত্তরও আসেনি।

অথচ শিল্পমহলের অভিযোগ, চূড়ান্ত শংসাপত্র পেতে অন্তত ৩৪টি ছোট-মাঝারি সংস্থার আবেদন পড়ে আছে। কোথাও দু’বছর। কোথাও এক বছর। সব মিলিয়ে যাদের বিনিয়োগ ৩০০ কোটি টাকার বেশি। যেমন, বর্ধমানে প্লাস্টিক কারখানায় বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পরেও সেই সংক্রান্ত শংসাপত্র পায়নি সংস্থা। আর এক সংস্থা চূড়ান্ত শংসাপত্র পায়নি আলিপুরদুয়ারে রাইস মিল চালুর পরেও। দুই সংস্থার কর্তৃপক্ষের দাবি, এর ফলে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বিভিন্ন খাতে (সুদে ভর্তুকি, বিদ্যুৎ বিল-মেশিনের দামের একাংশ ফেরত ইত্যাদি) যে সুবিধা পাওয়ার কথা, তা হাতে আসেনি। রাইস মিলের কর্তার দাবি, সব মিলিয়ে প্রাপ্য প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। যা পেলে ব্যবসা সম্প্রসারণে সুবিধা হত।

Advertisement

সুবিধা পেতে

• রাজ্যের কাছে আর্থিক সুবিধা পেতে প্রথমে নাম নথিভুক্ত করতে হয় শিল্প অধিকর্তার (ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ়) দফতরে।
• তার পরে মেলে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (আরসি)-পার্ট ওয়ান। যে শংসাপত্র রাজ্যের কাছে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার প্রথম শর্ত।
• এর পরের ধাপ আরসি-পার্ট টু বা এলিজিবিলিটি সার্টিফিকেট। যা মূলত বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর শংসাপত্র । এই শংসাপত্র হাতে এলে তবে আর্থিক সুবিধা প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার প্রশ্ন।

সমস্যা কোথায়

• ২০১৩ সালে ঘোষিত আর্থিক সুবিধা প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের অগস্ট পর্যন্ত। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে বছর গড়িয়ে যেতে বসলেও নতুন প্রকল্পের দেখা নেই এখনও।
• সরকারি ভাবে কোনও আর্থিক সুবিধা প্রকল্প না থাকায় তাতে নাম তোলারই প্রশ্ন নেই কোনও সংস্থার। ফলে লগ্নি করে প্রাপ্য সুবিধা পাওয়া দূরস্থান, প্রকল্পে নামই তুলতে পারছে না বেশ কয়েকটি সংস্থা।
• টাকা বকেয়া রয়েছে প্রকল্প থাকাকালীন সময়েরও। অর্থাৎ, ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রকল্প থাকলেও, সেই সময়ে প্রাপ্য সুবিধা এখনও ঘরে আসেনি অনেকের।

মালদহে ৭ কোটি টাকা লগ্নিতে তৈরি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় উৎপাদন শুরুর পরে প্রথমেই ধাক্কা খেয়েছে এক সংস্থা। তার কর্তা বলেন, ‘‘প্রকল্পে নাম তুলতে ফি সপ্তাহে জেলা শিল্প কেন্দ্রে যাচ্ছি। কিন্তু নতুন প্রকল্প না এলে কোথায় নাম উঠবে, সেই প্রশ্ন করছেন আধিকারিকরাই!’’

দেশে-বিদেশে রাজ্যকে লগ্নির আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে অন্যতম তাস হিসেবে বলা হয় নতুন শিল্প ও আর্থিক সুবিধা নীতির কথা। অথচ বছর গড়িয়েও সেই নীতি আর তার বকেয়া বিশ বাঁও জলে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement