প্রতীকী চিত্র।
দেশের মানুষের সঞ্চয় কমেছে, অথচ দেনা বাড়ছে বলে আগেই হিসেব দিয়েছিল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। এ বার সারা দেশের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে স্টেট ব্যাঙ্কের গবেষণা রিপোর্ট-ও জানাল, খরচ চালাতে গত অর্থবর্ষে বিপুল পরিমাণে ধার করতে হয়েছে বহু পরিবারকে। শুধু তা-ই নয়, সমীক্ষায় হুঁশিয়ারি, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ যে ভাবে আছড়ে পড়েছে, তাতে আগামী দিনে আরও বহু মানুষ দেনায় ডুবতে বাধ্য হতে পারেন।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, গত বছর অতিমারি রুটিরুজিতে ধাক্কা দেওয়ায় আমজনতাকে সঞ্চয়ের ভাঁড়ারে হাত দিতে হয়েছে। কিন্তু তাতেও যে অনেকের শেষ রক্ষা হয়নি তা স্পষ্ট করল ঋণ বৃদ্ধির এই হিসেব। স্টেট ব্যাঙ্কের রিপোর্ট বলছে, গত আর্থিক বছরে গৃহস্থ পরিবারে ঋণের অঙ্ক একলাফে বেড়ে জিডিপি-র ৩৭.৩% হয়েছে। যেখানে তার আগের অর্থবর্ষে ওই হার ছিল জাতীয় উৎপাদনের ৩২.৫%।
তবে অতিমারিই যে সাধারণ পরিবারগুলির দেনায় ডোবার একমাত্র কারণ নয়, সেটাও স্পষ্ট স্টেট ব্যাঙ্কের গবেষণাপত্রে। সেখানে বলা হয়েছে, ঋণ বাড়ছিল গত চার বছর ধরেই। আর তার জন্য দায়ী মোদী সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ। যেমন, ২০১৬ সালে নোট বাতিলের ক্ষত ভরতে না-ভরতেই ২০১৭ সালের জুলাইয়ে তড়িঘড়ি জিএসটি চালু। সংশ্লিষ্ট মহল করোনা-পূর্ব সময়ে আরও এক কারণ হিসেবে ২০১৯-এ অর্থনীতির ঝিমুনির দিকেও ইঙ্গিত করছে। তবে গৃহস্থ পরিবারে পুঁজির সঙ্কট গত অর্থবর্ষে এতখানি বেড়েছে করোনার হাত ধরে। রিপোর্ট বলছে, এ সবের সম্মিলিত ফল হিসেবেই বছর চারেকে ভারতীয় পরিবারগুলিতে ঋণ বৃদ্ধির অঙ্ক প্রায় ৭২০ বেসিস পয়েন্ট।
স্টেট ব্যাঙ্কের গবেষকদের ইঙ্গিত, নোট বাতিল এবং জিএসটি পরিচালন ব্যবস্থায় চূড়ান্ত দক্ষতার অভাব আঘাত হেনেছে সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থার উপর। তাতে ঘি ঢেলেছে অতিমারির সঙ্কট। তবে দুর্দশা এখানেই শেষ না-হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রিপোর্টের প্রধান রূপকার, স্টেট ব্যাঙ্কের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা সৌম্যকান্তি ঘোষের দাবি, ‘‘চলতি অর্থবর্ষে এক দিকে ব্যাঙ্কে আমানত কমছে। অন্য দিকে স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য হুহু করে বাড়ছে খরচ। এই দু’টি আগামী দিনে দেশের সাধারণ মানুষকে আরও বেশি ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে ফেলতে পারে।’’
তবে ব্যাঙ্কে আমানত কমা মানেই মানুষ সঞ্চয়ে বিমুখ হয়েছেন, এমনটা মানতে নারাজ মূলধনী বাজার বিশেষজ্ঞদের অনেকে। ওই অংশের দাবি, ব্যাঙ্কে সুদের হার দ্রুত কমছে বলে সেখানে টাকা রাখতে আগ্রহ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। বরং আকৃষ্ট হচ্ছেন মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে শেয়ারে বিনিয়োগে। অ্যাসোসিয়েশন অব মিউচুয়াল ফান্ডসের সিইও এন এস ভেঙ্কটেশ জানান, গত ৫ বছরে এসআইপি (মাসে মাসে ফান্ডে লগ্নি) প্রকল্পের মাধ্যমে ফান্ডে লগ্নি বেড়েছে ২.৫২ গুণ।