মঙ্গলবার দার্জিলিঙে বক্তৃতায় তাঁর দাবি, তেলের দামের থেকে মানুষের নজর ঘোরাতেই ‘বিচ্ছিন্ন’ কিছু ঘটনা নিয়ে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের বদনাম করতে চাইছে।
কলকাতায় ইন্ডিয়ান অয়েলের পাম্পে লিটারে পরিবহণ জ্বালানি দু’টির দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৫.৮৫ টাকা এবং ৫.৬৩ টাকা। ফাইল চিত্র।
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট মিটতে না মিটতেই ছুটতে শুরু করেছে তেলের দামের চাকা। আজ, বুধবার কলকাতায় সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে পেট্রল। অপেক্ষা এখন ডিজ়েলের। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেছে বিরোধীরা। এ বার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আক্রমণ শানালেন। মঙ্গলবার দার্জিলিঙে বক্তৃতায় তাঁর দাবি, তেলের দামের থেকে মানুষের নজর ঘোরাতেই ‘বিচ্ছিন্ন’ কিছু ঘটনা নিয়ে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের বদনাম করতে চাইছে। ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছুক্ষণ আগে বিজেপি নেতা অমিত মালব্য সেই তেলের দাম নিয়েই মমতার সরকারকে খোঁচা দিয়েছেন।
টানা ১৩৭ দিন এক থাকার পরে গত সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকে দেশে ফের পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়তে শুরু করে। ন’দিনের মধ্যে কলকাতায় ইন্ডিয়ান অয়েলের পাম্পে লিটারে পরিবহণ জ্বালানি দু’টির দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৫.৮৫ টাকা এবং ৫.৬৩ টাকা। বিরোধীদের বক্তব্য, দীপাবলির আগে তেলের উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাই করা হলেও তা এতটাই কম ছিল, যে মাত্র ন’দিনে পেট্রলের দাম পুরনো রেকর্ড পার করে ফেলল। এই প্রেক্ষিতেই মালব্য এ দিন পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিরোধী শাসিত বিভিন্ন রাজ্যকে পাল্টা আক্রমণ করেন। টুইটারে তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজস্থান, মহারাষ্ট্র এবং পশ্চিমবঙ্গে তেলের দাম সবচেয়ে বেশি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উদ্ধব ঠাকরে ও অশোক গহলৌত-সহ বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের উচিত রাজ্যের কর কমিয়ে ক্রেতাদের স্বস্তি দেওয়া। এই রাজ্যগুলির নীতি মূল্যবৃদ্ধিকে আরও মাথা তুলতে সাহায্য করছে।’’ এই টুইটের মধ্যেও অবশ্য তথ্যের লুকোচুরি খুঁজে পেয়েছেন নেটিজ়েনদের একাংশ। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, এনডিএ শাসিত মধ্যপ্রদেশ ও বিহারে তেলের উপরে উঁচু ভ্যাটের কথা কি মালব্য ভুলে গেলেন? তা ছাড়া বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যেই তেলের ভ্যাট বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির প্রায় কাছাকাছি।
এ দিন বীরভূমের হিংসার প্রসঙ্গে উল্লেখ করে মমতা বলেছেন, ‘‘তেলের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। আর গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গগুলি থেকে নজর ঘোরানোর জন্য বিজেপি কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে দেখিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বদনাম করতে চাইছে।’’ পাশাপাশি অর্থ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বকেয়া প্রায় ৯০,০০০ কোটি টাকা। সময় মতো জিএসটি ক্ষতিপূরণ মিলছে না। তার উপরে করোনা এবং একাধিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিপুল ব্যয় করতে হয়েছে। প্রবল আর্থিক সমস্যার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে তেলের দামে ১ টাকা করে ছাড় দিচ্ছে রাজ্য। প্রশাসনিক এক কর্তার কথায়, ‘‘কেন্দ্র তো বিপুল সেস বসিয়ে রেখেছে। তার একটা টাকাও রাজ্য পায় না। কেন্দ্রেরই তো উচিত সেস কমিয়ে স্বস্তি দেওয়া।’’
তবে প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তেলের দাম বাড়লে রাজ্যের রাজস্বেও তার একটা ইতিবাচক প্রতিফলন থাকে। সরকারের বাজেট নথি অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে বিক্রয় কর (এর অন্যতম প্রধান উপাদান তেলের থেকে আয়) আদায় অনুমান করা হয়েছিল ৮৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে সেই অঙ্ক দাঁড়ায় ৯৭০০ কোটি। আবার ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এই খাতে ১০,১০০ কোটির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, এই সময়ে তেলের দাম টানা বেড়েছে। তার প্রতিফলনই দেখা যাচ্ছে সরকারের বিক্রয় কর আদায়ে।