নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় ভারী শিল্পমন্ত্রী মহেন্দ্র নাথ পাণ্ডে এবং নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্তের বার্তা, এ বার দেশেই গাড়ি শিল্পের যন্ত্রাংশ তৈরি হোক আরও বেশি। যাতে আমদানি নির্ভরতা কমে। গাড়ি সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়ামের প্রেসিডেন্ট কেনিচি আয়ুকায়া, হুন্ডাই মোটরের এমডি-সিইও এস এস কিম এবং বণিকসভা সিআইআইয়ের প্রেসিডেন্ট টি ভি নরেন্দ্রনেরও বক্তব্য, বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশের জোগান কমার সমস্যা সুযোগে বদলে যাক দেশীয় উৎপাদনের হাত ধরে। যাতে অনিশ্চয়তাও কমে। তবে যন্ত্রাংশ শিল্পের দাবি, অতিমারির জেরে গাড়ির চাহিদা ধাক্কা খাওয়ায় তাদের পায়ের নীচের যে জমিটা হারিয়ে গিয়েছে আগে সেটা ফিরে পাওয়া জরুরি। তার দিশা দিতে দীর্ঘমেয়াদি, স্থায়ী এবং যে কোনও প্রযুক্তিরই উপযোগী রূপরেখা তৈরি হোক। যাতে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশে যন্ত্রাংশ তৈরির সময় এবং সুযোগ পাওয়া যায়।
বৃহস্পতিবার যন্ত্রাংশ শিল্পের সংগঠন অ্যাকমা-র বার্ষিক সভায় স্পষ্ট ব্যবসার আর্থিক অবস্থা নিয়ে আশঙ্কা। বুধবার যা ছিল গাড়ি সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়ামের সভাতেও। মোদী সরকার দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং বিকল্প জ্বালানির ব্যবহারে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু যন্ত্রাংশ শিল্প উদ্বিগ্ন বর্তমান সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা নিয়ে। গাড়িতে চড়া করের হার, তেলের আকাশছোঁয়া দাম এবং বিভিন্ন বিধি মানার ক্ষেত্রে বিপুল খরচ নিয়ে আগের দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মারুতি সুজুকি-র চেয়ারম্যান আর সি ভার্গব, টিভিএস মোটরের সিএমডি বেণু শ্রীনিবাসন। ভার্গবের দাবি ছিল, গাড়ি কেনা এবং গ্যারাজে রাখার খরচ এত বেড়েছে যে, সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষেরা চার চাকা, এমনকি দু’চাকার দিক থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আর সেটাই বিক্রি কমার মূল কারণ। এ দিন অ্যাকমা-ও বলেছে, গাড়ির চাহিদা না-ফিরলে ভুগবে যন্ত্রাংশ নির্মাতারাও। ফলে তা কেনার খরচ কমানোতেই আগে জোর দেওয়া হোক।
অ্যাকমার প্রেসিডেন্ট দীপক জৈনের বক্তব্য, গত অর্থবর্ষে যন্ত্রাংশ শিল্পের ব্যবসা কমেছে প্রায় ৩%। ব্যবসা বাড়াতে হস্তক্ষেপ করুক সরকার। অনিশ্চয়তার মধ্যে টিকে থেকে নতুন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে শিল্পকেও। এ জন্যই দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও রূপরেখা জরুরি।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, দীর্ঘমেয়াদি নীতি না-হলে গাড়ি শিল্প ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে পারবে না। কারণ বিপুল লগ্নি করতে হয় তাদের। দূষণ কমানোর উপযোগী বিএস৬ মাপকাঠির গাড়ি তৈরি করতে গোটা শিল্প প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা ঢেলেছিল। কেন্দ্র যে বৈদ্যুতিক গাড়ির কথা বলছে, তাতেও অনেক পুঁজি লাগবে।
গাড়ির তৈরির অন্যতম যন্ত্রাংশ সেমিকন্ডাক্টরের জোগান কমায় সঙ্কটে শিল্প। পেট্রল-ডিজ়েলচালিত গাড়িতেও এখন বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ লাগে বেশি। কিন্তু এগুলির সিংহভাগ আমদানি হয় বলে জোগান কমলে সমস্যায় পড়ে গাড়ি সংস্থা। কেনিচির মতে, এই সমস্যা সুযোগের দরজাও খুলে দেয়। এ দেশেই তা তৈরির জন্য কেন্দ্রের আগ্রহপত্র চাওয়া গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।