ট্রেনে ব্যাগের আয়তনও বেঁধে দেওয়া রেলের। ফাইল চিত্র
দূরপাল্লার ট্রেনে কতটা ওজনের লটবহর বিনা খরচে নেওয়া যায়, কোন শ্রেণির বগিতে ব্যাগের মাপ সর্বোচ্চ কতটা হতে পারে তার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। অনেকেরই সে নিয়ম জানা থাকে না। ফলে সমস্যায় পড়তে হয় সফরের সময়। কারণ, রেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাগপত্র নিয়ম বহির্ভূত ভাবে নিয়ে যাওয়াকে মারাত্মক অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। তাই জরিমানার পরিমাণও খুব বেশি। রেলের নিয়ম বলছে, না জানিয়ে অতিরিক্ত লটবহর নিয়ে ট্রেনে উঠলে সাধারণ খরচের দেড় গুণ দিতে হয় জরিমানা বাবদ।
রেলের কোন শ্রেণির যাত্রী তার উপরে নির্ভর করছে তিনি সফরের সময় নিজের সঙ্গে কতটা মালপত্র রাখতে পারবেন। যত দামি টিকিট তত বেশি মাল রাখা যায়। বাতানুকুল প্রথম শ্রেণির যাত্রীরা ৭০ কেজি পর্যন্ত মাল বিনাখরচে নিতে পারেন। এর পরেও ১৫ কেজি পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু এর বেশি হলেই তার জন্য ভাড়া দিতে হয়। তবে সঙ্গে রাখা মালপত্রের ওজন কখনও ১৫০ কেজির উপরে হতে পারে না। বাতানুকুল টু টিয়ারে ক্ষেত্রে এই তিনটি মাপ হল যথাক্রমে ৫০ কেজি, ১০ কেজি এবং ১০০ কেজি। বাতানুকুল থ্রি টিয়ারে যথাক্রমে ৪০ কেজি, ১০ কেজি এবং ৪০ কেজি। আর স্লিপার ক্লাসের ক্ষেত্রে ৪০ কেজি, ১০ কেজি ও ৮০ কেজি। দ্বিতীয় শ্রেণির বগিতে এই পরিমাণ যথাক্রমে ৩৫ কেজি, ১০ কেজি ও ৭০ কেজি।
ট্রেনে কেমন মাপের ব্যাগ, ট্রাঙ্ক, স্যুটকেস, বাক্স নিয়ে ওঠা যায় তারও নির্দিষ্ট মাপ ঠিক করা আছে। সাধারণ বগিতে এক জন যাত্রী ১০০ সেন্টিমিটার লম্বা, ৬০ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ২৫ সেন্টিমিটার উঁচু বাক্স সঙ্গে রাখতে পারেন। এর বেশি বড় কিছু থাকলে তা ব্রেক ভ্যানে তোলাই নিয়ম। বাতানুকুল থ্রি টিয়ার এবং চেয়ার কারের ক্ষেত্রে ব্যাগ বা বাক্সের আয়তন হতে হবে আরও ছোট। এ ক্ষেত্রে রেলের ঠিক করা সর্বোচ্চ মাপ ৫৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ৪৫ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ২২.৫ সেন্টিমিটার উঁচু। এর চেয়ে বড় ব্যাগ হলে সর্বনিম্ম ৩০ টাকা খরচে ব্রেক ভ্যানে তুলতে হবে।
সাধারণ রেল যাত্রীদের মতো ছোটদের মাথাপিছু মালপত্তরের পরিমাণও আলাদা। ৫ বছরের উপরের শিশুরাই মাল নিয়ে সফর করতে পারেন। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত এক জন শিশু পূর্ণ বয়স্ক যাত্রীদের তুলনায় অর্ধেক ওজনের মাল সঙ্গে রাখতে পারেন। তবে সর্বাধিক মাল হবে ৫০ কেজি।
ট্রেনে কী কী নিয়ে ওঠা যাবে তারও নিয়ম রয়েছে। কোনও বিস্ফোরক বা বিপজ্জনক, দাহ্য পদার্থ নিয়ে সফর করা যায় না। একই ভাবে অ্যাসিড, গ্যাস সিলিন্ডার, মৃত পশু নিয়ে ট্রেনে সফর করা যায় না। জীবিত পশু নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য নির্দিষ্ট আলাদা নিয়ম রয়েছে।
নিয়ম ভেঙে মাল নিয়ে ট্রেনে সফর করলে কী পরিমাণ জরিমানা দিতে হবে তা-ও নিশ্চিত করা রয়েছে। ভারতীয় রেলের নিয়ম অনুযায়ী কোনও যাত্রী সফরের সময়ে বা সফর শেষে ট্রেন থেকে নামার পরে বুক না করা অতিরিক্ত মাল-সহ ধরা পড়েন তবে সাধারণ ভাড়ার তুলনায় ছ’গুণ পর্যন্ত টাকা জরিমানা করা হতে পারে। একেবারে বিনা খরচে নেওয়া যায় এমন ওজনের চেয়ে কতটা বেশি মাল রয়েছে সেটাই ঠিক করে জরিমানার পরিমাণ। যদি ১৫ বা ১০ কেজির যে ছাড় পাওয়া যায় তার মধ্যে অতিরিক্ত মাল হয় তবে দেড় গুণ ভাড়া দিতে হয় জরিমানা বাবদ। তাই রেল বলে অতিরিক্ত মাল ব্রেক ভ্যানে বুক করে দেওয়াই ঠিক। একই সঙ্গে রেলের নিয়ম বলছে, নির্দিষ্ট ওজনের মধ্যে হলেও সাইকেল বা মোটরসাইকেল যাত্রী বগিতে বহণ করা যায় না।