বিয়ের মরসুমে মাছি তাড়াচ্ছে গয়নাপট্টিও

সোনার দোকান মানেই ঝলমলে সাজসজ্জা। তার জন্য মাঝারি মানের একটা দোকানেও মাসে বিদ্যুতের বিল আসে কম করে তিরিশ হাজার টাকা। সেই খরচটাও যে এ বার কী করে উঠবে, তা নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় বৌবাজারের গয়না ব্যবসায়ীরা।প্রতিটি দোকানেই পুরনো ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট নেওয়া হবে না বলে নির্দেশিকা সেঁটে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৪৭
Share:

সোনার দোকান মানেই ঝলমলে সাজসজ্জা। তার জন্য মাঝারি মানের একটা দোকানেও মাসে বিদ্যুতের বিল আসে কম করে তিরিশ হাজার টাকা। সেই খরচটাও যে এ বার কী করে উঠবে, তা নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় বৌবাজারের গয়না ব্যবসায়ীরা।প্রতিটি দোকানেই পুরনো ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট নেওয়া হবে না বলে নির্দেশিকা সেঁটে দেওয়া হয়েছে। দোকান মালিকরা বলছেন, ওই একটি নির্দেশই বাজার পুরো নষ্ট করে দিল।

Advertisement

সোমবার রাত সওয়া ৮টা নাগাদ হিসেবের খাতায় চোখ মেলাতে মেলাতে ওই এলাকার মাঝারি মাপের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুবোধ বসাক প্রায় কেঁদে ফেলে ফেললেন, ‘‘বউনি করব বলে এক ক্রেতার কাছ থেকে ১ টাকার একটা কয়েন নিয়েছিলাম। এর পর আর কোনও টাকা পাইনি। কে বলবে, সামনে বিয়ের ভরা মরসুম!’’ হাতে গোনা যে পাঁচ-সাতজন এসেছেন সকলেই কার্ডে কেনাকাটা করেছেন। ফল? ‘‘টিফিন খাওয়ার টাকা পর্যন্ত বাক্সে নেই। এখন ভাবছি কতক্ষণে দোকান বন্ধ করব,’’ বিধ্বস্ত লাগছিল দোকানের মালিককে।

নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে বউবাজারে ছোট, মাঝারি ও বড় সোনাপট্টিতে ক্রেতা উপচে পড়ে। সোমবার সন্ধ্যার ছবিটা পুরো উল্টো। আর একটি মাঝারি মাপের দোকানে মালিক দীপক দে বললেন, ‘‘সারা দিন দরজার দিকে তাকিয়ে বসে আছি। কখন এক জন ক্রেতা এসে ঢুকবেন! অন্য বছর এই সময়ে নাওয়া-খাওয়ার উপায় থাকে না।’’ দীপকবাবুর অন্য একটি পরিচয়ও রয়েছে। তিনি এ রাজ্যের ‘স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটি’র কোষাধ্যক্ষও বটে।

Advertisement

গোটা বৌবাজার এলাকায় ৩০০ গয়নার দোকান। এমনিতে প্রতিদিন সকাল ১০টায় দোকান খুলে রাত সাড়ে ৮টায় বন্ধ করার কথা। এখন কত তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করবেন সেটাই ভাবছেন দোকানিরা। এক দোকানের মালিক শাটার বন্ধ করতে করতে জানালেন, ‘‘সারাদিনে এক জন ক্রেতাও আসেননি।’’ গয়না-পাড়ার এক চায়ের দোকানি বলেন, ‘‘এই সময় সোনার দোকানে যেমন ভিড় হয়, তেমনি আমাদেরও বিক্রিবাট্টা ভালো হয়।এখন সারা দিনে এক বার কিংবা দু’বার চা যাচ্ছে।’’

শুধু ৫০০-১০০০ টাকার নোটই নয়, বড় স্বর্ণব্যবসায়ীদের অনেককে তাড়া করে বেড়াচ্ছে, আয়কর হানার ভয়ও। কালো টাকা বাড়িতে না রেখে অনেকেই সোনা কিনে রাখেন। শহরের বড় কয়েকটি সোনার দোকানে আয়কর দফতরের লোকেরা সম্প্রতি হানা দিয়েছেন। একটি বড় দোকানে গিয়ে খাতাপত্র দেখে, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে কোন কোন ক্রেতা এসেছেন তা নথিভুক্ত করে গিয়েছেন তাঁরা। বউবাজারের এক দোকানি বললেন, ‘‘আমরা পড়েছি সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে। একে ক্রেতা পাচ্ছি না। তার উপরে আয়করের ভয়।’’ প্রতি বছরের মতো এ বারও ২ ডিসেম্বর থেকে চার দিনের জন্য নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সোনার গয়নার প্রদর্শনী রয়েছে। প্রস্তুতিও শেষ। কিন্তু বাজারের হালই যদি না ফেরে, প্রদর্শনীতেই বা কী লাভ হবে, ভেবে পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

আপাতত কিছুদিন আশায় ভরসা রাখা ছা়ড়া গতি নেই। নিজে একটি বড় সোনার দোকানের মালিক তথা রাজ্যের ‘স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটি’র কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে তাই বললেন, ‘‘বাজারে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ বিক্রি কমে গিয়েছে। তবে দিন সাতেকের মধ্যে অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা করছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement