দাবি মুখ্য পরিসংখ্যানবিদের

লম্বা পথ পেরোনো বাকি মাঝারি আয়ের দেশ হতেও

চিনকে টপকে দ্রুততম বৃদ্ধির দেশ হয়ে ওঠার কৃতিত্ব ঢাকঢোল পিটিয়ে জাহির করে কেন্দ্র। কিন্তু মাথাপিছু আয়ের নিরিখে ওই পড়শি দেশের সঙ্গে একই বন্ধনীতে ঢুকতে এখনও লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে ভারতকে। ১০% বৃদ্ধির হার ধরে রাখতে হবে টানা অন্তত ১০ বছর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৫৩
Share:

ফুলের তোড়ায় স্বাগত। (বাঁ দিকে) অনন্তের সঙ্গে বণিকসভার কর্তা হেমন্ত বাঙ্গুর।

চিনকে টপকে দ্রুততম বৃদ্ধির দেশ হয়ে ওঠার কৃতিত্ব ঢাকঢোল পিটিয়ে জাহির করে কেন্দ্র। কিন্তু মাথাপিছু আয়ের নিরিখে ওই পড়শি দেশের সঙ্গে একই বন্ধনীতে ঢুকতে এখনও লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে ভারতকে। ১০% বৃদ্ধির হার ধরে রাখতে হবে টানা অন্তত ১০ বছর। সোমবার কলকাতায় এসে এমনই ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান সচিব তথা মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ টি সি এ অনন্ত। তবে জিডিপি-র নতুন হিসেব-পদ্ধতিতে গলদ নেই বলেও তাঁর দাবি।

Advertisement

সোমবার বণিকসভা এমসিসি চেম্বার আয়োজিত আলোচনাসভায় অনন্ত বলেন, টানা অন্তত এক দশক ১০% বা তা ছুঁইছুঁই বৃদ্ধির হার ধরে রাখতে পারলে, তবেই অন্তত মাঝারি আয়ের অর্থনীতি হয়ে ওঠার দরজা খুলতে পারে ভারতের সামনে।

উল্লেখ্য, যে-সমস্ত দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় বছরে ১,০২৬ থেকে ৪,০৩৫ ডলারের মধ্যে, তাদের নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের অর্থনীতির শ্রেণিভুক্ত করে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নাইজেরিয়ার মতো ৫২টি দেশ এর মধ্যে পড়ে। আর মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৪,০৩৬ থেকে ১২,৪৭৫ ডলারের মধ্যে হলে, তা উচ্চ-মধ্যবিত্ত আয়ের অর্থনীতি। চিন, ব্রাজিল সমেত ৫৫টি দেশ এই তালিকাভুক্ত।

Advertisement

অনন্তের মতে, শুধু বৃদ্ধির হার দেখে অর্থনীতির হাল-হকিকৎ বোঝা অসম্ভব। উচিত নয় অন্য কোনও দেশের সঙ্গে তার তুলনা টানা। তা করতে গেলে দুই দেশের অর্থনীতির আয়তন ও বৃদ্ধির হার দু’ই একসঙ্গে দেখা উচিত। তাঁর যুক্তি, ‘‘এক থেকে বেড়ে ২ হওয়া মানে ১০০% বৃদ্ধি। অথচ ২ থেকে বেড়ে ৩ হলে কিন্তু সেই বৃদ্ধির হারই নেমে আসে ৫০ শতাংশে।’’ তিনি বলেন, ১০% ছুঁইছুঁই বৃদ্ধির হার টানা প্রায় আড়াই দশক ধরে রেখেছিল চিন। ভারতকে তা বজায় রাখতে হবে কমপক্ষে ১০ বছর। তবে কি না মাথাপিছু আয় কিংবা জীবনযাত্রার মান চোখে পড়ার মতো ভাবে বদলানোর প্রশ্ন।

এক সময় মার্কিন মুলুক ও দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সে দীর্ঘদিন অর্থনীতির অধ্যাপনা করা অনন্তের অবশ্য দাবি, হাজার বিতর্ক হলেও জিডিপি হিসেবের নতুন নিয়মে গড়মিল নেই। তাতে শুধু কিছু বদল আনা হয়েছে। যেমন, উৎপাদন শিল্পে কোনও সংস্থার উৎপাদন মাপতে আগে মূলত শুধু তার কারখানার তথ্য (ডেটা) নেওয়া হত। কিন্তু এখন তার গবেষণা, বিক্রি ও বিপণন কেন্দ্র, এমনকী পরিষেবা কেন্দ্রও এর আওতায় পড়ে। যে তথ্য ভাণ্ডার থেকে শিল্পের পরিসংখ্যান নেওয়া হয়, পরিবর্তন আনা হয়েছে তাতেও। এবং এই সমস্ত কিছুর ফলে নতুন হিসাব আগের থেকে বাস্তবের বেশি কাছাকাছি এসেছে বলেই তাঁর দাবি।

শিল্প সূচক এবং জিডিপি-র পরিসংখ্যানে কল-কারখানায় উৎপাদনের ছবি দু’রকম কেন, উঠেছে সে প্রশ্নও। উত্তরে অনন্তের যুক্তি, ‘‘শিল্প সূচকে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার মাপা হয়। আর জিডিপি-তে দেখা হয় সেখানকার মূল্যযোগ (ভ্যালু অ্যাডিশন)। যা কাঁচামাল ও পণ্যের দামের ফারাকের উপর অনেকখানি নির্ভরশীল। ফলে দু’য়ের মধ্যে পার্থক্য অস্বাভাবিক নয়।’’ চলতি অর্থবর্ষে কেন্দ্র এই প্রথম শ্রম-সমীক্ষা চালু করতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement