—প্রতীকী চিত্র।
ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধ পরিস্থিতির বিরূপ প্রভাব ভারতের বাণিজ্যের উপর পড়তে পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। তাদের আশঙ্কা, এত ঢাকঢোল পিটিয়ে জি২০-র মঞ্চ থেকে ভারত-পশ্চিম এশিয়া-ইউরোপ আর্থিক করিডরের (আইএমইসি) যে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল, তা বুঝি জলে গেল!
সৌদি আরবের সঙ্গে ইজ়রায়েলের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি এবং শান্তি চুক্তির জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিল আমেরিকা। চুক্তিতে নিরাপত্তা নিয়ে সৌদিকে কী নিশ্চয়তা দেওয়া যায়, কথা হয় তা নিয়েও। আর্থিক করিডর ছিল এই চুক্তিরই একটি প্রতীক। এই বিষয়টি নিয়ে জি২০ সম্মেলনে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সবচেয়ে সক্রিয় ছিলেন বলে খবর। তার কারণ, প্রকল্পটি শুরু হলে সৌদি রেল লাইন পাতার জন্য পশ্চিমের যাবতীয় সাহায্য পাবে। শান্তি চুক্তি পাকাপোক্ত হবে। অন্য দিকে, জর্ডনের মাধ্যমে ইজ়রায়েলের হাফিয়া বন্দরের নাগাল পাবে আমেরিকা ও ইউরোপ। কিন্তু হামাসের আক্রমণের পরে পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে এই সব সম্ভাবনা আপাতত শীতঘুমে চলে গেল বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত আইএমইসি করিডরটি আসলে দু’টি পৃথক করিডরের সমন্বয়। পূর্ব করিডরটি ভারতকে আরব উপসাগরের সঙ্গে এবং উত্তর করিডরটি আরব উপসাগরকে ইউরোপের সঙ্গে যোগ করার কথা। এর মধ্যে তৈরি হওয়ার কথা আন্তর্দেশীয় রেল নেটওয়ার্ক-ও। যাতে ভারত থেকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, সৌদি, ইজ়রায়েল এবং ইউরোপে পণ্য পাঠানো সহজ হয়।
শুধুমাত্র করিডরের ভবিষ্যৎই নয়, পশ্চিম এশিয়ার ভূকৌশলগত স্থিতাবস্থাও এর ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল বলে মনে করা হচ্ছে। যার ফল ভুগতে হতে পারে ভারতকেও। অশোধিত তেল-সহ বাণিজ্য ক্ষেত্রে ইজ়রায়েলের উপর বিপুল নির্ভরতা রয়েছে ভারতের। সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, সবার আগে এই সংঘাতের প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে। সে ক্ষেত্রে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অশোধিত তেল আমদানিকারী দেশ হিসাবে ভারতের হাতে ছেঁকা লাগতে বাধ্য। সে ক্ষেত্রে অর্থনীতির গতি শ্লথ হতে পারে।
এশিয়ার মধ্যে ইজ়রায়েল ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। বিশ্বে দশম। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, ওষুধ শিল্প, কৃষি, জল, তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিকম-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে রয়েছে ভারত-ইজ়রায়েল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। ভারত থেকে দামি পাথর, বস্ত্র, রাসায়নিক পণ্য রফতানি হয় সে দেশে। আসে মুক্তো, খনিজ, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম। ফলে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হলে এই শিল্পগুলিতে আমদানি-রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। গত অর্থবর্ষে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১০০০ কোটি ডলারের বেশি। সে দেশে ভারতের বিনিয়োগও যথেষ্ট। এ দেশের বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, ওষুধ সংস্থার উপস্থিতি রয়েছে ইজ়রায়েলে। সব মিলিয়ে কূটনৈতিক মহলের মতে, হামাস-ইজ়রায়েল যুদ্ধ কোনও ভাবেই আঞ্চলিক যুদ্ধে সীমাবদ্ধ থাকছে না। ভারত-সহ বিভিন্ন দেশে দ্রুত তা টের পাওয়া যাবে।