প্রতীকী ছবি
ভারত-চিনের সীমান্ত উত্তেজনায় চিনা পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন পক্ষ। টেলিকম, রেল-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চিনা যন্ত্রাংশ ব্যবহার না-করা এবং দেশীয় যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ ব্যবহারে জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। জল্পনা বাড়ছে চিনা পণ্য আমদানি কমাতে তাতে চড়া শুল্ক বসানো বা গুণমানে কড়াকড়ি বাড়ানো নিয়েও। এই পরিস্থিতিতে চিন থেকে যন্ত্রাংশ আমদানিতে বাধা তৈরি হলে তারাই বা কী ভাবে এগোবে, তা নিয়ে কপালে ভাঁজ পড়ছে ধুঁকতে থাকা গাড়ি শিল্পের। অন্য অনেক দেশের মতো বেশ কিছু যন্ত্রাংশের জন্য পড়শি দেশের উপরে নির্ভরশীল যারা।
যন্ত্রাংশের আমদানি নির্ভরতা কমানোর যুক্তি মানলেও, সেগুলির সব ভারতে তৈরির সম্ভাবনা আপাতত নেই বলেই মনে করছেন গাড়ি শিল্পের কর্তারা। এ জন্য বরং দেশে সহজে ব্যবসার পরিবেশ তৈরি এবং দীর্ঘমেয়াদি ও সুনির্দিষ্ট নীতির পক্ষে সওয়াল করছেন তাঁরা।
গাড়ি শিল্প সূত্রের খবর, ভারতে তৈরি হওয়া গাড়ির যন্ত্রাংশের প্রায় ১০% আসে চিন থেকে। তার উপরে আমদানি হওয়া মোট যন্ত্রাংশের সব চেয়ে বেশিও আসে সে দেশ থেকে। যন্ত্রাংশ শিল্পের সংগঠন অ্যাকমার ডিজি বিন্নি মেহতা জানান, করোনা-সংক্রমণ শুরুর সময় অন্যান্য দেশের মতো ভারতের গাড়ি শিল্পেও আমদানি নির্ভরতা কমানো নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সেই চর্চা আরও বাড়বে।
আরও পড়ুন: নিয়ম মেনে বিদ্যুৎ বিল, দাবি সংস্থার
কিন্তু তা কতটা, কত দ্রুত সম্ভব?
আমদানি নির্ভরতা কমানোর কথা মেনেও মারুতি-সুজুকির চেয়ারম্যান আর সি ভার্গবের মতে, এ জন্য সহজে লগ্নির পরিবেশ জরুরি। দেশীয় যন্ত্রাংশ সংস্থাকে প্রতিযোগিতায় টক্কর নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘কেন লগ্নিকারী চিনে বা ভিয়েতনামে যান? কেন আমরা স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও আমদানি উপর নির্ভরশীল? প্রধানমন্ত্রী ছ’বছর ধরে বললেও, এখনও লগ্নি সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়নি।’’ ভার্গব ও বিন্নির মতে, লগ্নিকারী ও সরকার, এ ক্ষেত্রে উভয়েরই দায়িত্ব রয়েছে।
সূত্রের খবর, গাড়িতে এয়ারব্যাগের মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের সেন্সর বা বৈদ্যুতিক গাড়ির লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির মতো জরুরি যন্ত্রাংশ, সবই আসে চিন থেকে। ভার্গবের সুরেই এই শিল্পের একাধিক কর্তা জানান, স্থানীয় যন্ত্রাংশ শিল্প গড়তে সময় দরকার। যেমন, বিএস৪ থেকে মাত্র তিন বছরে বিএস৬ মাপকাঠির গাড়ি তৈরির জন্য যথেষ্ট সময় না-মেলায় কিছু যন্ত্রাংশ আমদানির করতে হচ্ছে।
আর তা ছাড়া, ভারতের গাড়ি বাজার এখনও চিনের মতো বড় নয়। ফলে যে কোনও উৎপাদন শিল্প ব্যবসায়িক ভাবে লাভজনক হতে হলে যে পরিমাণে পণ্য তৈরি করা প্রয়োজন, তা এখনও এ দেশে সম্ভব নয়। একই সঙ্গে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির বিষয়টিও। গাড়ি শিল্পের কর্তারা বলছেন, সেই লগ্নি পেতে হলে প্রতিযোগিতার বাজারে ব্যবসার পরিবেশ আরও সহজ করা ও দীর্ঘমেয়াদি নির্দিষ্ট নীতি জরুরি। না-হলে এখনই ওই সব যন্ত্রাংশ তৈরির সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই তাঁদের মত।
আরও পড়ুন: করোনা, আমপানে বন্ধ রাজ্যের মুরগি রফতানি