—প্রতীকী ছবি।
শ্রীনগরে শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ারের নেতৃত্বে বৈঠকে বসে বৃহস্পতিবার কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড কর্তৃপক্ষের (ইপিএফও) অছি পরিষদ সিদ্ধান্ত নিল চলতি অর্থবর্ষ অর্থাৎ ২০২০-২১ সালের জন্য পিএফে জমা তহবিলের উপরে সুদের হার ৮.৫ শতাংশে অপরিবর্তিতই রাখার। অর্থাৎ আগের অর্থবর্ষের জন্য পিএফের পাঁচ কোটির বেশি সদস্য যা পেয়েছিলেন, এ বারও তা-ই পাবেন। আর সেই প্রসঙ্গেই ফিরে এল আগের অর্থবর্ষের সুদের টাকা পাওয়া নিয়ে দীর্ঘ টালবাহানার স্মৃতি আর অনিশ্চয়তার ভয়। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, গত বার ৮.৫% থেকে হার বাড়ানোর দাবি উঠেছিল, কিন্তু সরকার কানে তোলেনি। উল্টে তা কমানোর আশঙ্কা তৈরি করে সকলের পিএফ অ্যাকাউন্টে সুদ জমা দিতে দীর্ঘ সময় লাগিয়ে দেয়। কর্মী ইউনিয়নগুলির প্রশ্ন, এ বারও তার পুনরাবৃত্তি হবে না তো? বিশেষ করে সরকার যেখানে পিএফ তুলে দেওয়ার পক্ষে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে এ দিনই।
অছি পরিষদে এআইইউটিইউসি-র প্রতিনিধি সদস্য দিলীপ ভট্টাচার্য জানান, ‘‘এ দিনের বৈঠকে সরকার পক্ষের তরফে প্রস্তাব রাখা হয় ইপিএফ ১৯৯৫ প্রকল্পের পরিবর্তে নিউ পেনশন সিস্টেম বা এনপিএস (জাতীয় পেনশন ব্যবস্থা) চালু হোক। তবে কর্মী প্রতিনিধিরা এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করায় বিষয়টি নিয়ে কথা আর এগোয়নি।’’
এ দিন শ্রম মন্ত্রকের বিবৃতিতে অবশ্য বলা হয়েছে, ৮.৫% সুদ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে ঋণপত্র এবং শেয়ার বাজারের লগ্নি থেকে পিএফ তহবিলের আয় ভাল হওয়ায়। আশা করা যায়, সুদ খাতে টাকা মিটিয়েও মোটা অঙ্ক থেকে যাবে। ফলে ভবিষ্যতেও যাতে অন্তত এই হারেই সুদ দেওয়া যায়, তা নিশ্চিত করা যাবে। এর আগে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, করোনার জন্য টাকা জোগাড় করতে বহু সদস্য পিএফ তহবিল থেকে মোটা টাকা তুলে নেওয়ায় এবং অনেক কর্মীর এই খাতে জমা কমায় সুদ কমতে পারে।
গত বছর ৫ মার্চ প্রথমবার ২০১৯-২০ সালের জন্য ৮.৫% সুদের হার ঘোষণার পরে তাতে কেন্দ্র সায় দিতেই বহু দিন লাগিয়ে দিয়েছিল। তাই আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল ইপিএফে প্রস্তাবিত সুদ আরও কমার। কারণ, আর্থিক ঝিমুনির পরে ভারতের অর্থনীতি তখন করোনার কামড়ে বিধ্বস্ত। সংক্রমণ আটকাতে লকডাউন ডেকে সমস্ত কাজ-কারবারে তালা ঝোলাতে হয়েছে সরকারকে। সরকারি সূত্রের খবর ছিল, করোনাকালে টাকা-পয়সায় টানাটানির দোহাই দিয়ে অর্থ মন্ত্রক তার অনুমোদন ঝুলিয়ে রেখেছে অতটা সুদ দেওয়া মুশকিল বলে ইঙ্গিত করে। পরে গত সেপ্টেম্বরে ইপিএফও-র অছি পরিষদের আর এক বৈঠকে তা ৮.৫০ শতাংশে বহাল রাখা হলেও, নজিরবিহীন ভাবে দু’ভাগে সুদ মেটানোর সিদ্ধান্ত হয়। ৮.১৫% তখনই, ঋণপত্রে পিএফের তহবিল লগ্নির আয় থেকে। আর ০.৩৫% ডিসেম্বরের মধ্যে, শেয়ার বাজারে ইটিএফে (এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) খাটানো পিএফ তহবিলের রোজগার থেকে। পিএফ তহবিলের একাংশ শেয়ার বাজারে খাটে ঠিকই, তবে আগে কখনও সুদের সঙ্গে সরাসরি তা জোড়েনি।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য গত ডিসেম্বরের শেষে গঙ্গোয়ার একলপ্তে ৮.৫% সুদ জমার খবর শোনানোয় স্বস্তি ফেরে। ততদিনে পেরিয়েছে যে বছরের সুদ, তার পরের অর্থবর্ষের (চলতি) ন’মাস। এ দিনও কর্মী ইউনিয়নগুলির একাংশের বক্তব্য, গত বছর শেয়ার বাজার বিপুল বাড়ায় দেরি হলেও একলপ্তে পুরো সুদ মিলেছে। কিন্তু বাজার তলিয়ে গেলে যে মিলত না, প্রচ্ছন্ন ভাবে সেই ইঙ্গিতও মিলেছিল। সকলেরই দাবি, সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে সুদ মেটাতে প্রায় সারা বছর লাগিয়ে দেওয়া যায় না।
নিয়ম অনুসারে, অছি পরিষদের সিদ্ধান্ত পাঠানো হবে অর্থ মন্ত্রকে। তারা অনুমোদন করলে বিজ্ঞপ্তি জারি করবে শ্রম মন্ত্রক এবং চলতি অর্থবর্ষের জন্য সদস্যদের পিএফ অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে ৮.৫% সুদ। যে হার ২০১২-১৩ সালের পরে সব থেকে কম।