পশ্চিমবঙ্গে রেলের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারের তরজার অন্ত নেই। এই নিয়ে দু’তরফে চাপান-উতোর যত তীব্রই হোক না কেন, সারা দেশে দ্রুত নতুন রেলপথের কাজ শেষ করতে, বিশেষত রেলপাত পরিবহণের ক্ষেত্রে কেন্দ্র তাকিয়ে রয়েছে বাংলার ব্রেথওয়েটের দিকেই। উত্তর-পূর্বাঞ্চল বা জম্মু-কাশ্মীরের দুর্গম এলাকায় রেলপথ তৈরির কাজ হোক বা আগামী দিনের প্রস্তাবিত পণ্যবাহী করিডর নির্মাণ, সব ক্ষেত্রেই ২৫০ মিটার লম্বা রেলপাত বহনের ক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা হয়ে উঠতে চলেছে কলকাতা ভিত্তিক এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির তৈরি বিশেষ ওয়াগন নিয়ে তৈরি রেক।
রেল সূত্রের খবর, এখন লাইনে ঝাঁকুনি কমানো ছাড়াও রক্ষণাবেক্ষণের ঝক্কি কমাতে স্বল্প দৈর্ঘ্যের রেলপাতের বদলে ২৬০ মিটার দীর্ঘ পাত ব্যবহার করা হয়। বিপুল ওজন ছাড়াও দৈর্ঘ্যের কারণে ওই মাপের রেলপাত অতি সাবধানে বহন করা জরুরি। এত দিন দেশে মাত্র ১১টি ‘বগি ফ্ল্যাট রেক’ (বিএফআর) ওই কাজ করত। সাধারণ বিএফআরে কোনও দেওয়াল থাকে না। শুধু ওয়াগনের পাটাতন এবং নীচে চাকা থাকে। রেক থেকে রেলপাত নামানোর কাজ রীতিমতো কঠিন ও কষ্টসাধ্য। সেই সমস্যা দূর করতে ২১টি ওয়াগনের বিশেষ রেক তৈরি করেছে ব্রেথওয়েট। এ রকম ২৮টি রেক তৈরির জন্য রেলের কাছ থেকে বরাত পেয়েছে কলকাতা ভিত্তিক সংস্থাটি।
বরাত বৃত্তান্ত
•. দেশে রেললাইন পাতার জন্য রেলপাত বহনের ওয়াগন তৈরির বরাত পেয়েছে ব্রেথওয়েট
•. কলকাতা ভিত্তিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটিকে মোট ২৮টি রেকের বরাত দিয়েছে রেল
•. ব্রেথওয়েটই একমাত্র সংস্থা, যারা এই
দায়িত্ব পেয়েছে
•. আরডিএসও-র তত্ত্বাবধানে ওই ওয়াগনের নকশা, পরিকল্পনা এবং উৎপাদন সব কিছুই করবে তারা
রেকের খতিয়ান
• প্রতিটি রেকে থাকবে মোট ২১টি ওয়াগন
• এক একটি রেকে ওয়াগন আবার পাঁচ রকমের। তার মধ্যে ২টি বাল্কহেড, ১৬টি ইন্টারমিডিয়েট, ১টি
করে থ্রেডার, র্যাম্প এবং
চুট ওয়াগন
• সামনে এবং পিছনের ওয়াগনে জোড়া যাবে ইঞ্জিন
• মাঝখানে ১৬টি ওয়াগনে
২৬০ মিটার লম্বা রেলপাত বহন করা হবে
• প্রয়োজন অনুযায়ী রেলপাত সরানোর কাজে ব্যবহৃত হবে তিনটি ওয়াগন
• এক একটি রেক তৈরিতে খরচ আনুমানিক ৬.৫ কোটি টাকা
সংস্থার কর্তারা জানাচ্ছেন, ওই রেকে ২৬০ মিটার দীর্ঘ ৬০টি রেলপাত একসঙ্গে বহন করা যায়। বিশেষ বৈশিষ্ট্যের পাত তোলা ও নামানোর কাজও অনেক সহজ বলে তাঁদের দাবি। পাত বোঝাই রেক সর্বোচ্চ ৭৫ কিমি গতিতে ছুটতে পারে। বাঁক বা চড়াই আছে, এমন রেলপথেও তা যাতে স্বচ্ছন্দে ছুটতে পারে, সেটা মাথায় রাখা হয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছে পার্বত্য এলাকায় ব্রডগেজ লাইনে গ্রাহ্য সীমার বাঁক বা চড়াই সামলানোর উপরে। প্রতিটি রেকে ২১টি ওয়াগন থাকছে। এ ছাড়া আরও তিনটি বিশেষ ওয়াগন থাকছে, যেগুলি রেকে দীর্ঘ রেলপাত জায়গামতো বসানো বা টেনে বার করার কাজে সাহায্য করবে।
ইতিমধ্যেই নতুন ওয়াগনের প্রোটোটাইপ (প্রযুক্তিগত ভাবে তৈরি প্রথম ওয়াগন) পরীক্ষিত হয়েছে। রেলের মান নির্ধারক সংস্থা রিসার্চ ডিজ়াইন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অর্গানাইজেশনের (আরডিএসও) ছাড়পত্রও মিলেছে। ব্রেথওয়েটের কর্ণধার জ্যোতিষ কুমার বলেন, ‘‘রেলের তরফে আপাতত ২৮টি রেক সরবরাহের বরাত দেওয়া হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি সেই কাজ শুরু হবে।’’
দেশে আর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সেলের ভিলাইয়ের কারখানা ছাড়া একটি বেসরকারি ইস্পাত নির্মাতা সংস্থা ২৬০ মিটার দীর্ঘ রেলপাত তৈরি করে। ব্রেথওয়েটই একমাত্র সংস্থা, যাদের তৈরি রেকগুলিকে এ বার থেকে ওই পাত বহনের কাজে লাগানো হবে।