অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান চিন্তার কারণ ছিল পুরনো ঋণে সুদের বোঝা। তার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য চাইতেন। এ বার সেই সুদের বোঝা মোদী সরকারেরও মাথা ব্যথারকারণ হয়ে উঠছে।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বুধবার সংসদে যে বাজেট পেশ করেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, মোদী সরকারের রাজস্ব খাতে আয়ের ৪০ শতাংশেরও বেশি অর্থ পুরনো ঋণে সুদ মেটাতেই চলে যাচ্ছে। পাঁচ বছর আগে সেই খাতে খরচ হত রাজস্ব খাতে আয়ের ৩৩% টাকা। তার পর থেকে দফায় দফায় সুদের বোঝা ক্রমশ বেড়েছে।
অর্থমন্ত্রী বাজেটে বলেছেন, আগামী আর্থিক বছরে পরিকাঠামো-সহ মূলধনী খাতে এই প্রথম ১০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হবে। বাজেটের নথি বলছে, এই প্রথম সুদের খরচ মেটাতেও ১০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হচ্ছে। বস্তুত, যে সব খাতে সরকার সব থেকে বেশি খরচ করছে, তার মধ্যে সুদের বোঝা প্রধান। অর্থনীতির গবেষক প্রসেনজিৎ বসু বলেন, ‘‘সুদের পিছনে রাজস্ব খাতের ৪০ শতাংশের বেশি অর্থ খরচ করার ফলে এর অর্থ দাঁড়াল, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য মোদী সরকারকে পরিকাঠামোয় যে অর্থ খরচ করতে হচ্ছে, তার জন্য সরকারের হাতে টাকা থাকছে না। সে জন্য আবার কেন্দ্রকে নতুন করে ধার করতে হচ্ছে।’’
কেন্দ্রীয় অর্থসচিব টি ভি সোমানাথন অবশ্য এর জন্য কোভিডকেই দায়ী করছেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘কোভিডের সময় আয় কমে যাওয়া এবং খরচ বেড়ে যাওয়ায় সব দেশেই ঋণ ও সুদের বোঝা বেড়েছে। সুদের বোঝা কম থাকা কাম্য। কিন্তু তা এমন পর্যায়ে চলে যায়নি যে সামলানো যাবে না।’’ অর্থসচিবের বক্তব্য, চলতি আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের কর খাতে বাজেটের অনুমানের তুলনায় প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা বেশি আয় হয়েছে। আগামী আর্থিক বছরেও কর বাবদ আয় জিডিপি-র বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ১০.৫% হারে বাড়বে বলে অনুমান। সেই সুবাদে সুদের বোঝা কমে আসবে।
বাজেট নথি বলছে, চলতি অর্থবর্ষে কর বাবদ সরকারের ২০.৮৬ লক্ষ কোটি টাকা আয় হলে সরকারকে প্রায় ১৭.৫৫ লক্ষ কোটি টাকা দেনা করতে হয়েছে। জিডিপি-র তুলনায় রাজকোষ ঘাটতির হার কমলেও ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে। সেই ঘাটতি পূরণ করতে আগামী অর্থবর্ষে সরকারকে ১৫.৪ লক্ষ কোটি টাকা ধার করতে হবে। এর মধ্যে সরকারি ঋণপত্র থেকে আসবে ১১.৮ লক্ষ কোটি টাকা। আর্থিক বিষয়ক সচিব অজয় শেঠের দাবি, ‘‘ঋণের পরিমাণ খুব বেশি বাড়ছে না। ফলে তার ধাক্কায় বাজারে সুদের হার বাড়বে না।’’