প্রতীকী চিত্র
দেশে পেট্রল-ডিজেলে নিজেদের ভাগের উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে আমজনতাকে দামে সুরাহা দেওয়ার দাবি উপেক্ষা করছে সরকার। বদলে অশোধিত তেল কিছুটা সস্তায় কিনে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি যাতে আমদানি খরচ বাঁচাতে পারে, সেটাই এখন তাদের পাখির চোখ। যে কারণে শুক্রবার বিশ্ব বাজারে তার জোগান এবং দাম নিয়ে নিজেদের অসন্তোষ রফতানিকারী দেশগুলির সংগঠন ওপেক এবং তার সহযোগীদের খুব স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিল কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার ওপেক মে থেকে জুলাই ধাপে ধাপে কিছুটা উৎপাদন বাড়াতে রাজি হলেও, শুক্রবার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী অভিযোগ তুললেন, গত বছর সৌদি আরব-সহ ওই গোষ্ঠীর সদস্যদের তরফে যে পরিমাণ উৎপাদনের আশ্বাস এসেছিল তার ধারেকাছেও পৌঁছনোর চিহ্ন নেই। অথচ উৎপাদন না-বাড়ায় অশোধিত তেলের দাম চড়ছে বলে ধাক্কা খাচ্ছে ভারতের মতে আমদানি নির্ভর দেশগুলির অর্থনীতি। তাঁর দাবি, কৃত্রিম ভাবে নয়, বিশ্ব বাজারে তার জোগান এবং দাম নিয়ন্ত্রণ হওয়া উচিত বাজারের নিয়মে মেনে। সস্তার তেল পেতে বিকল্প কৌশলও ছকছে কেন্দ্র।
সংশ্লিষ্ট মহলের অবশ্য দাবি, ইউপিএ জমানায় তুলনায় অনেক চড়া ছিল অশোধিত তেলের দর। আসল কথা হল, এখন এক ঢিলে দুই পাখি মারতে মরিয়া মোদী সরকার। কারণ, আমদানি খরচ কমানো গেলে দেশে তেলের দাম বাড়াতে হবে না, আবার উৎপাদন শুল্ক ছেঁটে আয়ের সঙ্গে আপসের প্রশ্নও উঠবে না। যে কারণে ওপেকের পদক্ষেপ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি তাদের কাছে লাগাতার উৎপাদন বাড়ানোর আর্জি জানাচ্ছে তারা। অন্য দিকে চাপ বাড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলিকে যেমন তেল আমদানির শর্ত শিথিল করার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলছে, তেমনই বার্তা দিচ্ছে ওপেক গোষ্ঠীর সদস্যদের উপরে অত্যধিক নির্ভরতা (৬০%) কমিয়ে বিকল্প রফতানিকারী খোঁজার। সরকারি সূত্রের দাবি, সস্তা ও সহজ শর্তে তেল মিললে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলিকে পশ্চিম এশিয়ার বদলে অন্যত্র (যেমন সম্প্রতি আমেরিকা, গুয়ানা থেকে কেনা হয়েছে) নজর দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ওই সূত্র জানাচ্ছে, পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে সংস্থাগুলি যে শর্তে তেল কেনে তাতে রফতানিকারীদের সুবিধাই অগ্রাধিকার পায়। যেমন, দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রেই চুক্তি হয় বার্ষিক বা নির্দিষ্ট মেয়াদি। সেই শর্ত মেনেই পুরো সময়ের জন্য কিনতে হয়। আবার কোনও মাসে তেল কেনার অন্তত ছ’সপ্তাহ আগে ভারতীয় ক্রেতাকে আগাম জানাতে হয় ও রফতানিকারী দেশের বেঁধে দেওয়া গড় দামে কিনতে হয়। কিন্তু আদর্শ বাজার নীতি অনুযায়ী তেল নেওয়ার দিনের দাম দেওয়া উচিত। তাতে সে দিন দাম কমলে তার সুবিধা পাবেন ক্রেতা। সূত্রের কথায়, ‘‘এটি শেয়ার বাজারের মতো হওয়া উচিত। তাতে দর কমলে সে দিন তেল কিনে ফায়দা তোলা যেতে পারে।’’