আগামী ১০ বছরের জন্য ইরানের চাবাহার বন্দর পরিচালনার ভার হাতে নিল ভারত। এই প্রথম বিদেশে কোনও সমুদ্র বন্দরের দায়িত্ব পেল এ দেশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নির্বাচন চলাকালীনই তড়িঘড়ি ইরানের বন্দর নিয়ে চুক্তি সইয়ের পিছনে রয়েছে বৈদেশিক কূটনীতি। আরব সাগরে চাবাহারের পাশাপাশি ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবালকে বঙ্গোপসাগরে মায়ানমারের সিটওয়ে বন্দরের ভার নেওয়ার বিষয়েও গত মাসে মঞ্জুরি দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
মন্ত্রক সূত্রে খবর, চাবাহারের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ায় ভারত আফগানিস্তান, ইরান হয়ে রাশিয়া পর্যন্ত জলপথ পরিবহণে আধিপত্য কায়েম করতে পারবে। পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে আফগানিস্তান এবং পশ্চিম এশিয়ায় পৌঁছতে বিকল্প রাস্তা হিসেবে কাজে লাগাতে পারবে সেটিকে। বৃহত্তর ইউরেশিয়ান (ইউরোপ-এশিয়া) অঞ্চলেও বন্দরটি দেশের প্রধান সংযোগস্থল হতে চলেছে। সূত্র বলছে, পাকিস্তানের গদর বন্দর ও চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোডের সঙ্গে টক্কর নিতে এটি তুরুপের তাস হতে পারে নয়াদিল্লির।
সোমবার জাহাজ ও বন্দরমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল তেহরানে ইরানের সড়ক ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী মেহেরদাদ বাজ়রপাশের উপস্থিতিতে ভারতের ইন্ডিয়ান পোর্টস গ্লোবাল এবং ইরানের পোর্ট অ্যান্ড ম্যারিটাইম অরগানাইজ়েশনের মধ্যে ওই চুক্তি হয়েছে। ২০১৫ থেকে চাবাহারের শহিদ বেহেস্তি বন্দর ব্যবহারের জন্য প্রতি বছর ভারত-ইরানের চুক্তি নবীকরণ হচ্ছিল। নতুন চুক্তির ফলে টানা ১০ বছর বন্দরের পরিচালনভার পেল ভারত, যা মেয়াদ পার হলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে নবীকরণ হবে।
ভারতের কৌশলগত অবস্থান মজবুত করার অস্ত্র চাবাহারের নিকটতম বন্দর গুজরাতের কান্দালা। দূরত্ব ৫৫০ নটিক্যাল মাইল। মুম্বইয়ের দূরত্ব ৭৮৬ নটিক্যাল মাইল। সোনোয়াল জানান, ৭২০০ কিলোমিটার বিস্তৃত আন্তর্জাতিক নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডরের সঙ্গে চাবাহারকে যুক্ত করার পরিকল্পনা। ভারত, পশ্চিম এশিয়া, ইউরেশিয়ার মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং পরিবহণ খরচ ও সময় কমানোর নিরিখে প্রাণকেন্দ্র হতে পারে এটি।
পাকিস্তান পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিকে করাচি বন্দর ব্যবহার করে বাণিজ্য বাড়ানোর প্রস্তাব দিচ্ছিল। কিন্তু ভারত চাবাহারকে লাভজনক বিকল্প হিসেবে তুলে ধরে। কাজ়াকাস্তান, উজবেকিস্তানের মতো দেশ এর মাধ্যমেই ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ব্যবসা বাড়াতে চায়। এ দেশের ব্যবসায়ীরাও সহজে ও সুলভে পশ্চিম এশিয়ায় পৌঁছতে পারবেন। আইএনএসটিসির মাধ্যমে চাবাহার বন্দরে যুক্ত হতে চাইছে আমেরিকাও।