প্রতীকী ছবি।
অতিমারির তিন ঢেউ পার করে অর্থনীতি খানিকটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। কাজে ফিরতে শুরু করেছিলেন মানুষ। চাহিদা ও বিক্রিবাটার কাঁধে ভর করে গতি বাড়ছিল আর্থিক কর্মকাণ্ডের। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা ও তাকে সামাল দিতে সুদ বৃদ্ধির বাধ্যবাধকতা কি শেষে সেই প্রক্রিয়াতে জল ঢালবে, এমন আশঙ্কাই প্রকট হচ্ছে বিভিন্ন সমীক্ষায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বক্তব্য, ভারতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কগুলির সুদ বৃদ্ধির ফলে আগামী ছয় থেকে আট মাস চাহিদা বিঘ্নিত হতে পারে। যা মন্থর করতে পারে অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়াকে।
উন্নত ও উন্নয়নশীল মিলিয়ে ২৪টি দেশের অন্তত ১৮,০০০ ক্রেতার মতামত নিয়ে (ভারতে প্রায় ১০০০) সম্প্রতি ফিউচার কনজ়িউমার ইন্ডেক্সের নবম সংস্করণ প্রকাশ করেছে ইওয়াই। সেখানে জানানো হয়েছে, জিনিসপত্র ও পরিষেবার দামের দৌড় দেখে জীবনযাপনের খরচ সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়ছে মানুষের। তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে কেনাকাটার সিদ্ধান্তের উপরে। বৃদ্ধি পাচ্ছে খরচ কমিয়ে সঞ্চয় বাড়ানোর প্রবণতা। ভারতের ৭৭% মানুষ জানিয়েছেন, আগামী এক বছরে তাঁরা ইতিবাচক আর্থিক পরিবর্তনের আশা করছেন। কিন্তু ৬৪% আবার বলছেন, মাথা তোলা খরচ তাঁদের পছন্দের কেনাকাটায় বাধা তৈরি করছে। ৮০% মানুষ খরচ কাটছাঁট করে জোর দিচ্ছেন সঞ্চয়ে। এমন পরিস্থিতি অবশ্য সারা বিশ্বেই। বর্ধিত খরচের ফলে কেনাকাটায় বাধার কথা জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ৭৭%, ব্রাজ়িলের ৬৩%, চিনের ৪২% মানুষ। আমেরিকা, কানাডা ও ব্রিটেনের ক্ষেত্রে তা যথাক্রমে ৫০%, ৫২% ও ৪২%।
বস্তুত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে তেলের দাম বৃদ্ধি, মূল্যবৃদ্ধি মাথা তোলা, বিশ্ব অর্থনীতি শ্লথ হওয়া এবং দেশে চাহিদা কমাকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে পরপর দু’টি অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে আর এক উপদেষ্টা সংস্থা মর্গ্যান স্ট্যানলি। তাদের বক্তব্য, চাহিদা কমলে উৎপাদন ও শিল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হবে। সে ক্ষেত্রে মূলধনী খরচও অল্প সময়ের মধ্যে তুলে আনা কঠিন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের ব্যাখ্যা, ভারত-সহ সারা বিশ্বের অর্থনীতি এখন পড়েছে উভয় সঙ্কটে। অতিমারি কাটিয়ে বাজারে চাহিদা বাড়ছিল বটে। কিন্তু রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার জেরে জোগান বিঘ্নিত হওয়ায়, মূলত তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে দেশে দেশে ছড়াচ্ছিল মূল্যবৃদ্ধির আগুন। তাকে আটকাতে এখন সুদ বাড়াতে হয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্কগুলিকে। কিন্তু তাতে শিল্পের মূলধন সংগ্রহের খরচ বৃদ্ধি এবং বাজার থেকে নগদ কমায় চাহিদা কমলেও রুদ্ধ হবে বৃদ্ধির গতি।