ফাইল চিত্র।
সাধারণত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে গড়পরতা ১৩-১৪টি কালবৈশাখী ঝড় হয়। কিন্তু এ বার এখনও পর্যন্ত তার দেখা নেই। বিক্ষিপ্ত ভাবে কোথাও কোথাও ঝড়-বৃষ্টি হলেও, প্রায় সর্বত্রই চড়ছে তাপমাত্রা। বহু জায়গায় বইছে তাপপ্রবাহ। ফলে হাঁসফাঁস গরমে নজিরবিহীন উচ্চতা ছুঁয়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। এমন অবস্থায় চলতি মাসে রাজ্যে শীতাতপ যন্ত্রের (এসি) বিক্রি প্রাক-করোনা পর্বকেও ছাপিয়ে গেল। বিক্রেতাদের দাবি, চাহিদা আরও অনেক বেশি। পুরোটা মেটানো যাচ্ছে না সেমিকনডাক্টরের আকালের জন্য জোগান কম থাকায়। সেটা হলে হয়তো বিক্রি নজির গড়ে ফেলত। এমনকি অনলাইন বাজারেও এসি চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। তবে গোটা দেশ যখন বিদ্যুৎ সঙ্কটের মুখে, তখন এসি-কুলার-পাখার অতিরিক্ত ব্যবহার সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে চিন্তার কোনও কারণ নেই বলেই জানাচ্ছে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর। এমনকি বিদ্যুতের চাহিদা রেকর্ড গড়লেও। তাদের দাবি, রাজ্যে বিদ্যুতের কোনও ঘাটতি নেই। চাহিদা সামাল দেওয়ার মতোই উৎপাদন হচ্ছে। কয়লাও মজুত আছে যথেষ্ট।
রিটেলার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার পশ্চিমবঙ্গের কো-চেয়ারপার্সন এবং গ্রেট ইস্টার্ন রিটেলের ডিরেক্টর পুলকিত বেদ জানান, যন্ত্রাংশের মূল্যবৃদ্ধি ও চিপের ঘাটতির জন্য জোগান কম থাকায় এসি-র দাম বেড়েছে। তা সত্ত্বেও ২০১৯ সালের এপ্রিলের থেকে এ বার রাজ্যে বিক্রি বেড়েছে প্রায় ১৯%। উৎপাদন কম হওয়ায় চাহিদার পুরোটা মেটানো যাচ্ছে না। ক্রেতারা যে পছন্দসই এসি কিনতে পারবেন, সেটাও বলা যাচ্ছে না।
এমনিতে গ্রীষ্মে মোট বৈদ্যুতিন পণ্য বিক্রির ৭০-৮০ শতাংশই এসি এবং কুলার, জানাচ্ছেন সেগুলি তৈরির সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়েমার প্রেসিডেন্ট এরিক ব্রাগানজ়া। তাঁদের দাবি, এ বার পূর্বাঞ্চলে পশ্চিমবঙ্গেই এসি বিকিয়েছে সর্বাধিক। তবে ইঙ্গিত, চড়া মূল্যবৃদ্ধি-সহ নানা কারণে তার দাম আরও বাড়তে পারে।
এসি-পাখা-কুলারের ব্যবহার বাড়ায় রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ও সিইএসসি-র এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, গত বুধবার সন্ধ্যায় রাজ্যে মোট সর্বোচ্চ চাহিদা এক সময়ে ১০,০০০ মেগাওয়াট ছাড়ায়। মাঝ এপ্রিল থেকে এখন দৈনিক গড়ে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এলাকায় ১৫০ মেগাওয়াট এবং সিইএসসি এলাকায় ১০০ মেগাওয়াট বাড়তি চাহিদা তৈরি হচ্ছে।
সিইএসসি-র এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর (ডিস্ট্রিবিউশন সার্ভিস) অভিজিৎ ঘোষ অবশ্য বলছেন, তাঁদের এলাকায় দিনের সর্বোচ্চ চাহিদা এখন ২০১৯ সালের মতোই, প্রায় ২৩০০ মেগাওয়াট। তাঁরা এটিকে স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন। তিনি এবং রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের সিএমডি পি বি সেলিমের দাবি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি পুরোদমে চলছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি নেই। কয়লার জোগানও স্বাভাবিক। সেলিম জানান, দৈনিক ৫৫ হাজার টনের কয়লা মিলছে। মজুত আছে আরও ১.৫ লক্ষ টন।
কোথাও বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলেও বিদ্যুৎ দফতরের দাবি, উৎপাদনে ঘাটতি না থাকায় বণ্টন সংস্থাগুলির লোডশেডিং করার প্রয়োজন পড়ছে না। তবে গ্রাহক এসি বসালে তার জন্য বিদ্যুতের লোড বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে আবেদন করতে হয়। অনেক সময়ে গ্রাহক তা না করে সংস্থার অজান্তে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ালে এলাকার ট্রান্সফরমারে বাড়তি চাপ পড়ে সেটি বসে যেতে পারে। তখন স্থানীয় ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই পরিকঠামোর উন্নতির স্বার্থে গ্রাহকদের সেই তথ্য জানাতে বলছে তারা।