বাজেট ২০১৮-১৯: করের বোঝা বাড়া নিয়ে আশঙ্কা প্রবল

বৃদ্ধি বেহাল, পায়ের নীচে সর্ষে বাজারের

নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১২ হাজার পয়েন্ট উঠে এসেছে সেনসেক্স। মাত্র সাড়ে তিন বছরে। তা-ও আবার অর্থনীতির হাল তেমন ভাল না হওয়া সত্ত্বেও।

Advertisement

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫২
Share:

অর্থনীতির পালে হাওয়া নেই। দেখা নেই বেসরকারি লগ্নির। বৃদ্ধি বেহাল। বিশেষত নোটবন্দি আর তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর জোড়া ধাক্কার পরে। কিন্তু এই সমস্ত কিছুর মধ্যেও শেয়ার বাজারের দৌড় থামার কোনও লক্ষণ নেই। সূচক উঠছে রকেট গতিতে। অনেকের আশঙ্কা, এতে তৈরি হচ্ছে বড়সড় বুদবুদ। যা ফাটলে ধস নামবে বাজারে। অন্য পক্ষের অবশ্য যুক্তি, কিছুটা পতন হলেও বাজারের একেবারে তলিয়ে যাওয়া শক্ত। অন্তত মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নি যতক্ষণ অব্যাহত আছে। আর এই সব কিছুর মধ্যে বাজারের চোখ আটকে বাজেটে। সঙ্গী আশঙ্কাও। কর বাড়বে কি?

Advertisement

নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১২ হাজার পয়েন্ট উঠে এসেছে সেনসেক্স। মাত্র সাড়ে তিন বছরে। তা-ও আবার অর্থনীতির হাল তেমন ভাল না হওয়া সত্ত্বেও। যার মূল কারণ, বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির প্রায় নাগাড়ে বিনিয়োগ এবং বাজারে দেশি মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নি বৃদ্ধি। পড়তি সুদের জমানায় বেশি রিটার্ন পেতে যেখানে এখন ভিড় বাড়ছে সাধারণ মানুষের। ২০১৬ সালে বাজারে ফান্ডগুলির বিনিয়োগ যেখানে ৩৫,৭০০ কোটি ছিল, সেখানে ২০১৭ সালে তা ১.০৭ লক্ষ কোটি ছাড়িয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে এ বার বাজেটে দীর্ঘ মেয়াদি মূলধনী লাভের উপর কর ছাড়ে কোপ পড়ার আশঙ্কা করছেন শেয়ার বাজারের অনেকে। ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক বলেন, ‘‘দীর্ঘ মেয়াদি মূলধনী লাভ করের ছাড়ে কোপ পড়তে পারে বাজেটে।’’

Advertisement

ষাঁড়ের দৌড়

• মোদীর মসনদ দখলের সময়ে সেনসেক্স ২৪ হাজারের ঘরে

• এখন তা ছাড়িয়েছে ৩৬ হাজার

• সাড়ে তিন বছরে লাফ ১২ হাজার পয়েন্ট!

• শেষ প্রায় আট মাসেই বেড়ে গিয়েছে হাজার পাঁচেক

খটকা, আশঙ্কাও

• অর্থনীতির পালে হাওয়া নেই। অথচ সূচক উঠছে রকেট গতিতে

• নোটবন্দি ও তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর ধাক্কায় বৃদ্ধি কুপোকাত। কিন্তু বিরাম নেই বাজারের দৌড়ে

• অনেকের আশঙ্কা, এই বুদবুদ ফাটা সময়ের অপেক্ষা। সে ক্ষেত্রে ধস নামার সম্ভাবনা বাজারে

বাজেটে সম্ভাবনা

• তুলেই দেওয়া হতে পারে শেয়ারে দীর্ঘ মেয়াদি লগ্নিতে কর ছাড়

• তা না হলেও শেয়ার আরও বেশি সময় ধরে রাখতে হতে পারে ওই সুবিধা পেতে

• এখন এক বছর ধরে রাখলেই ১৫% মূলধনী লাভ কর বাঁচানো যায়। তা বেড়ে হতে পারে ২-৩ বছর

• এখন ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ড আয়ে কর লাগে না। কমতে পারে সেই সীমাও

বাজারের আর্জি

• ডিভিডেন্ড বণ্টনের উপর যে-কর সংস্থাকে গুনতে হয়, তা তুলে দিক কেন্দ্র

এ বিষয়ে জল্পনা দু’টি। এক, ওই সুবিধা পুরোপরি তুলে দেওয়া হতে পারে। আর দুই, কর ছাড় পেতে এক বছরের বদলে শেয়ার ধরে রাখতে হতে পারে ২-৩ বছর। বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সেনসেক্স ৩৬ হাজারে। তাই দীর্ঘ মেয়াদি মূলধনী লাভের পরিমাণ এখন অনেকটাই বেড়েছে। সেখানে কর বসিয়ে সরকারের আয়ের ভাল পথ খুলতে পারে। শেয়ারের দাম এমনিতেই চড়া। মুনাফা মোটা। কেন্দ্র ভাবতে পারে, এর উপর আবার কর ছাড়ের সুবিধা কেন?’’ কৌশিকও বলেন, ‘‘এখন বিশ্বে মাত্র চারটি দেশে ওই ছাড় চালু আছে। ভারত ছাড়া কোনও বড় দেশে তা নেই।’’

বাজারের ধারণা, বড়সড় বদল আসতে পারে ডিভিডেন্ডে কর ছাড়ের ক্ষেত্রেও। বিএনকে ক্যাপিটাল মার্কেটসের ডিরেক্টর অজিত খন্ডেলওয়াল বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে ডিভিডেন্ড বাবদ আয় অনেক বেড়েছে। তাই সেখান থেকেও আয়ের পথ বাড়াতে কিছু সুবিধা কাটছাঁট করা হতে পারে।’’ সেই সঙ্গে তিনি জানান, ‘‘ডিভি়ডেন্ড বণ্টনের উপর যে-কর সংস্থাগুলিকে গুনতে হয়, তা তুলে দিতে অর্থমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছি আমরা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement