ফাইল চিত্র।
গত সপ্তাহে বাজার হেঁটেছে চলতি পরিস্থিতিকে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না-করে। দৈনিক করোনা সংক্রমণ যখন চার লক্ষের আশেপাশে, মৃত্যু চার হাজারের উপরে এবং চারিদিকে চূড়ান্ত অব্যবস্থা স্পষ্ট, তখনও সপ্তাহের প্রথম দু’দিনে সেনসেক্স উঠেছে ১৪৬১ পয়েন্ট। উপযুক্ত কারণ ছাড়া এই ধরনের উত্থান যে যুক্তিযুক্ত নয়, তা বুঝতে পেরে বুধবারই লগ্নিকারীরা হাতের শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা ঘরে তুলতে আসরে নামেন। ফলে বুধ ও বৃহস্পতিবার মিলিয়ে সেনসেক্স নামে ৬২৯ পয়েন্ট। এর পরে স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ কয়েকটি সংস্থার ভাল ফল, দৈনিক সংক্রমণ তিন লক্ষের নীচে নেমে আসা এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ভারত সরকারকে মোটা ডিভিডেন্ড দেওয়ার ঘোষণায় সপ্তাহের শেষ দিনে ফের লাফিয়ে ৯৭৬ পয়েন্ট ওঠে সেনসেক্স। ৫০ হাজার ছাড়িয়ে এখন সে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৫০,৫৪০ পয়েন্টে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সেনসেক্স সর্বকালীন উচ্চতায় পৌঁছেছিল। ছুঁয়েছিল ৫২,১৫৪ অঙ্ক। সেই জায়গা থেকে মুম্বইয়ের সূচক এখন ১৬১৪ পয়েন্ট পিছনে। অর্থাৎ, বর্তমান সঙ্কটের সময়েও বাজার কিন্তু বেশ তেজি। পাশাপাশি, গত ১২ মার্চের পরে গত সপ্তাহে নিফ্টিও ফিরে এসেছে ১৫ হাজারের ঘরে।
এই প্রসঙ্গে মনে রাখা প্রয়োজন, বাজারের এই তেজি ভাবের সঙ্গে অর্থনীতির কিন্তু তেমন কোনও সামঞ্জস্য নেই। জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে সংস্থাগুলির ফলাফল ভাল হয়েছিল ওই সময়ে অতিমারির পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসায় এবং তার ফলে বাজারের চাহিদা মাথা তুলতে শুরু করায়। চলতি ত্রৈমাসিকে কিন্তু পরিস্থিতি সেই সময়ের তুলনায় ঘোরালো। সারা দেশে না-হলেও শিল্পপ্রধান কয়েকটি রাজ্যে টানা চলেছে লকডাউন। ফলে মার খাচ্ছে উৎপাদন এবং বিক্রিবাটা। এই সময়ে বহু ছোট সংস্থা বন্ধ হয়েছে। বিনোদন এবং পর্যটন ব্যবসা এক রকম বন্ধের মুখে। ফলে নতুন করে কাজ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। এই সবের প্রভাব কিন্তু অর্থনীতি আগামী দিনে এড়িয়ে থাকতে পারবে না। ফলে বাজারে লেনদেনের সময়ে সতর্ক থাকতে হবে লগ্নিকারীদের।
অর্থনীতির দুঃসংবাদ এখানেই শেষ নয়। এপ্রিলে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ১১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (১০.৪৯%)। ফল এবং ডিমের দাম ২৭.৪% বেড়েছে। জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ ২১%। এই হারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব আগামী দিনে খুচরো বাজারেও দেখা যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গুটিকয়েক আশার খবরও যে নেই তা অবশ্য নয়:
•সপ্তাহ দুয়েক হল ঋণপত্রের ইল্ড ৬ শতাংশের আশেপাশে বা নীচেই রয়েছে। যার জন্য এখন কিছুটা স্বস্তিতে বন্ড এবং বন্ড ফান্ডের লগ্নিকারীরা। ১০ মার্চ ইল্ড পৌঁছে গিয়েছিল ৬.২৫ শতাংশে। মনে রাখতে হবে, বন্ডের দাম কমলে ইল্ড বাড়ে এবং উল্টোটা হলে ইল্ড কমে।
• গত ৩১ মার্চ শেষ হওয়া ন’মাসে নিজেদের উদ্বৃত্ত থেকে কেন্দ্রের কোষাগারে ৯৯,১২২ কোটি টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। যা কিন্তু কেন্দ্রের চলতি অর্থবর্ষে হিসেবের খাতায় যোগ হবে। ফলে রাজকোষ কিছুটা চাঙ্গা হবে মোদী সরকারের। গত পুরো অর্থবর্ষের জন্য কেন্দ্রকে ৫৭,১২৮ কোটি টাকা দিয়েছিল শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
• গত সপ্তাহে জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকের ভাল ফলাফল প্রকাশ করেছে বেশ কয়েকটি সংস্থা। স্টেট ব্যাঙ্কের মুনাফা ৮০.১৫% বেড়ে পৌঁছে গিয়েছে ৬৪৫১ কোটি টাকায়। আগের বছরের একই সময়ে ৫২৩৭ কোটি টাকা লোকসানের জায়গায় এ বার এয়ারটেলের লাভ হয়েছে ৭৫৯ কোটি টাকা। টাকা মোটরসের লোকসান কমেছে। ৯৮৬৩ কোটি টাকা থেকে তা ৭৫৮৫ কোটি টাকা হয়েছে। প্রায় তিন গুণ বেড়ে হিন্দালকোর লাভ পৌঁছেছে ১৯২৮ কোটি টাকায়।
সোনায় লগ্নিকারীরা গত বছর ভাল লাভের সন্ধান পেয়েছিলেন। ২০২০ সালে একটা সময়ে ১০ গ্রাম খাঁটি সোনার দাম উঠে গিয়েছিল ৫৮,০০০ টাকার আশেপাশে। পরে অবশ্য তা অনেকটা নেমে ৫০,১২৩ টাকায় বছর শেষ করে। ২০২০ সালে সোনা ৩১.৬% লাভের সন্ধান দিয়েছে। তার আগের বছর সোনা রিটার্ন দিয়েছিল ২১.৯%। ধাতুটির দাম অবশ্য সম্প্রতি ৪৭,০০০ টাকার আশেপাশে নেমে এসেছে। এই সুযোগে ভবিষ্যতে অনিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখে অনেকেই সোনায় লগ্নির কথা ভাবছেন। সরকারও এর মধ্যে প্রকাশ করেছে গোল্ড বন্ড ইসুর কর্মসূচি। প্রথম ধাপে এই বন্ড ইসু করা হয়েছে ১৭-২১ মে।
(মতামত নিজস্ব)