কর্তব্যে ‘গাফিলতির’ অভিযোগ ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী থাকার সময়ে

ঘুষ কাণ্ডে বিপাকে আইএমএফ প্রধান

বিতর্কের কেন্দ্রে ফের আইএমএফ কর্ণধার। ২০১১ সালে যৌন কেলেঙ্কারির দায়ে ধরা পড়া তদানীন্তন কর্তা ডমিনিক স্ট্রস-কানের পরে এ বার ফ্রান্সের ঘুষ কাণ্ডে অভিযোগের তির আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (আইএমএফ)-এর বর্তমান ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টিন ল্যাগার্দে-র দিকে। অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন ল্যাগার্দে। তিনি বুধবার বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। এর বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করার জন্য আমার আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছি।”

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

প্যারিস শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০২:২৮
Share:

ক্রিস্টিন ল্যাগার্দে। ছবি: রয়টার্স

বিতর্কের কেন্দ্রে ফের আইএমএফ কর্ণধার। ২০১১ সালে যৌন কেলেঙ্কারির দায়ে ধরা পড়া তদানীন্তন কর্তা ডমিনিক স্ট্রস-কানের পরে এ বার ফ্রান্সের ঘুষ কাণ্ডে অভিযোগের তির আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (আইএমএফ)-এর বর্তমান ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টিন ল্যাগার্দে-র দিকে।

Advertisement

অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন ল্যাগার্দে। তিনি বুধবার বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। এর বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করার জন্য আমার আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছি।” ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৮ সালের ৪০ কোটি ইউরো বা ৫২ কোটি ৭০ লক্ষ ডলারের (৩,২১৪.৭ কোটি টাকা) ঘুষ কেলেঙ্কারিতে তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধান (ফরম্যাল ইনভেস্টিগেশন) শুরু করল ফ্রান্সের তদন্ত কমিশন। প্রসঙ্গত, ফরাসি প্রজাতন্ত্রের আইন অনুসারে আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধান কার্যত চার্জশিট দেওয়ারই নামান্তর। তদন্তকারী ম্যাজিস্ট্রেট যখন এ ব্যাপারে এক রকম নিশ্চিত থাকেন, তখনই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই মামলায় আরও ৫ অভিযুক্তের মধ্যে রয়েছেন স্টিফেন রিচার্ড, যিনি ল্যাগার্দের আমলে সেনাধ্যক্ষ ছিলেন। বর্তমানে তিনি বৃহৎ টেলিকম সংস্থা অরেঞ্জ-এর কর্ণধার। ল্যাগার্দে অবশ্য ইতিমধ্যেই বলেছেন, “আমি সব সময়েই দেশের স্বার্থে আইন মেনে কাজ করেছি।”

ল্যাগার্দে বুধবার নিজেই কবুল করেন, এই ঘুষ কাণ্ডে নজরদারির ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে কর্তব্যে ‘গাফিলতির’ অভিযোগ আনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আইএমএফের শীর্ষ পদ থেকে ইস্তফা দেবেন কি না, তার জবাবে ল্যাগার্দে বলেন “না।” তবে তাঁর ভাগ্য এখন আইএমএফ পরিচালন পর্ষদের হাতেই ঝুলছে। তারাই স্থির করবে, তাঁকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রাখা হবে কি না। ল্যাগার্দে বলেন, “ওয়াশিংটনে আইএমএফ দফতরে গিয়ে পর্ষদকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলব।” এই সংক্রান্ত মামলায় মঙ্গলবারই ল্যাগার্দেকে ১৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জেরা করে প্যারিসের বিশেষ আদালত ‘কোর্ট অব জাস্টিস’। মন্ত্রীদের আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে বিভিন্ন মামলার দায়িত্বে রয়েছে এই আদালত। এই নিয়ে চতুর্থ বার জেরার মুখোমুখি হলেন ল্যাগার্দে।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত ২০০৮ সালে প্রভাবশালী ফরাসি ব্যবসায়ী বার্নার্ড তাপি-কে সরাসরি ফরাসি সরকারের তরফ থেকে ৪০ কোটি ইউরো পাইয়ে দেওয়া নিয়ে। তদন্তকারী বিচারকদের ধারণা, ২০০৭ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিকোলাস সারকোজিকে প্রচারে সমর্থন করার ‘পুরস্কার’ হিসেবেই তাঁকে ওই অর্থ পাইয়ে দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, ওই নির্বাচনে জয়ী হন সারকোজি এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকেন ১৬ মে ২০০৭ থেকে ১৫ মে ২০১২ সাল পর্যন্ত।

তবে এর পিছনে রয়েছে ১৯৯৩ সালের আর একটি বিতর্ক বার্নার্ড তাপি বনাম ক্রেডিট লিয়নেজ ব্যাঙ্ক। আংশিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ক্রেডিট লিয়নেজের মাধ্যমে ওই বছরে তাপি আর্থিক সঙ্কটে পড়ে বিক্রি করে দেন তাঁর হাতে থাকা নামী স্পোর্টসওয়্যার গোষ্ঠী অ্যাডিডাস। তাপির অভিযোগ ছিল, অ্যাডিডাস বিক্রির সময়ে সংস্থার মূল্যায়ন কম করে দেখায় ব্যাঙ্কটি। তদন্তকারীদের সূত্রে ইঙ্গিত, সেই থেকেই এক সময়কার মন্ত্রী এবং সরকারি মহলে বিপুল প্রভাব থাকা শিল্পোদ্যোগী তাপির দাবি ছিল অ্যাডিডাস হস্তান্তর বাবদ তাঁর ক্ষতি পুষিয়ে দিতে হবে ফরাসি সরকারকেই। তার কারণ ক্রেডিট লিয়নেজ ব্যাঙ্কের আংশিক মালিকানা সরকারি হাতে। সেই মতোই তাপিকে ওই অর্থ পাইয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পাশাপাশি ছিল সারকোজির নির্বাচনী প্রচারে তাপির টাকা ঢালা। আর, এই বেআইনি আর্থিক লেনদেনেই ল্যাগার্দে জড়িত বলে অভিযোগ তদন্তকারী সংস্থার। তাদের মতে, অর্থমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও ল্যাগার্দে সরকারি কোষাগার থেকে দেওয়া এই বিপুল অঙ্কের ঘুষ কাণ্ডে ‘উদাসীন’ থেকেছেন, যা ‘কর্তব্যে গাফিলতির’ সামিল।

ল্যাগার্দে অবশ্য পিঠ বাঁচাতে আগেই বিষয়টি তিন সদস্যের সালিশি কমিটির কাছে পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা তাপিকে অর্থ দেওয়ার পক্ষেই রায় দেন। তদন্তকারী সংস্থা অনুসন্ধান করে দেখছে, ওই কমিটি আসলে সারকোজির হয়ে প্রচার চালানোর জন্য তাপিকে ‘পুরস্কৃত’ করার লক্ষ্যে ‘সাজানো’ হয়েছিল কি না এবং হয়ে থাকলে সেখানে ল্যাগার্দের ভূমিকা কী ছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement