নিজস্ব চিত্র।
কাঁচা পাটের দাম নিয়ে জুট কমিশনারের দফতরের সঙ্গে চটকল মালিকদের চাপান-উতোর অব্যাহত!
চটের বস্তার প্রধান উপকরণ কাঁচা পাট। সেই কাঁচামালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দামের ঊর্ধ্বসীমা কুইন্টাল প্রতি ৬৫০০ টাকায় বেঁধে দিয়েছিল জুট কমিশনারের দফতর। কিন্তু চট শিল্পের একাংশের দাবি, তাতে উল্টে বেআইনি মজুতদারি বেড়েছে। কালোবাজারে কাঁচা পাট বিক্রি হচ্ছে ৭২০০-৭৩০০ টাকায়। তা ঠেকাতে ওই দাম হয় বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হোক, নয়তো করা হোক ৭২০০ টাকা। অথবা যেহেতু চটকলগুলিকে ওই কাঁচামাল বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই বাড়ানো হোক তা থেকে তৈরি বস্তার দাম। কিন্তু জুট কমিশনারের দফতর মনে করে, বেআইনি মজুতদারির কারণেই বাজারে কাঁচা পাটের কৃত্রিম অভাব তৈরি হচ্ছে। তার জন্যই হচ্ছে কালোবাজারি। তাই পাট কিংবা বস্তার দাম বাড়িয়ে কার্যত বেআইনি মজুতদারদের ভর্তুকি দেওয়ার কোনও দায় কেন্দ্রের নেই।
চট শিল্পের একাংশের বক্তব্য, এই দড়ি টানাটানির মধ্যে আদতে ক্ষতি হচ্ছে শিল্পের। চটকলগুলি বন্ধের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে শ্রমিকদের রোজগার। এই অবস্থায় বেআইনি মজুতদারি ও কালোবাজারি বন্ধ করাই সমস্যা সমাধানের একমাত্র রাস্তা। পাট শিল্প মহলের দাবি, এ বছর ৯০ লক্ষ বেল (১ বেল মানে ১৮০ কেজি) পাট উৎপাদন হয়েছে। তার প্রায় ৫০ শতাংশই রয়েছে মজুতদারদের হাতে।
কৃষিপণ্য মজুতের নিয়ম অনুযায়ী, দেশে উৎপাদিত খাদ্যশস্যের ১০০% রাখতে হয় চটের বস্তায়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বস্ত্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল তার মূল উপকরণ কাঁচা পাটের দাম নিয়ে চটকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ওই দাম আর বাড়ানো হবে না। কারণ, বস্তা তৈরির ৬০% খরচই কাঁচা পাটের। যার দাম ঠিক হয় আগের তিন মাসের গড় দামের ভিত্তিতে। এই দামের উপরে উৎপাদন খরচ এবং মুনাফা যোগ করে চটের বস্তার দাম ঠিক হয়। ফলে কাঁচা পাটের দাম যত বাড়বে, ততই চড়তে থাকবে বস্তার দাম। যা মেটাতে হবে কেন্দ্রকে।
এই প্রেক্ষিতে চটকল মালিকদের অভিযোগ, কাঁচা পাটের দামের ঊর্ধ্বসীমা না বাড়ানো এবং কালোবাজারের যাঁতাকলে পড়ে মাঝখান থেকে বস্তার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাঁদের সংগঠন আইজেএমএ-র চেয়ারম্যান রাঘবেন্দ্র গুপ্ত বলেন, ‘‘জুট কমিশনারের নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দিয়ে কাঁচা পাট কিনতে হচ্ছে। ফলে আমাদের লোকসান বাড়ছে। তা ছাড়া জুট কমিশনারের সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, তাঁদের নির্ধারিত দামের থেকে বেশি দামে বাজার থেকে কাঁচা পাট কিনলে চটকলগুলি আইন ভাঙছে বলে ধরে নেওয়া হবে। আমাদের সিদ্ধান্ত, গুদামে যা কাঁচা পাট আছে, তা দিয়ে যত দিন সম্ভব উৎপাদন চালু রাখবে মিলগুলি। তারর পরেও সমস্যার সমাধান না হলে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’