ইনফোসিসের সিইও বিশাল সিক্কা দাবি করলেন প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণমূর্তির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক উষ্ণ। সোমবারও তাঁদের মধ্যে কথা হয়েছে অ্যাপল ওয়াচ নিয়ে!
চেয়ারম্যান আর শেষাশয়ীর দাবি, সংস্থার প্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গে পর্ষদের লড়াই সংবাদমাধ্যমের মনগড়া। সিইও-র বিপুল বেতন বৃদ্ধি থেকে সংস্থা ছাড়ার সময়ে প্রাক্তন সিএফও রাজীব বনসলকে আকাশছোঁয়া টাকার প্রতিশ্রুতি— সম্প্রতি ওঠা সমস্ত অভিযোগ নিয়ে উত্তর দিতে এ দিন দীর্ঘ সাংবাদিক সম্মেলনও করলেন তিনি এবং সিক্কা।
কিন্তু সব কিছুর পরেও ধোঁয়াশা সেই থেকেই গেল। সংস্থা পরিচালনায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নাম না-করেও এ দিন ফের শেষাশয়ীকে বিঁধলেন সংস্থার প্রাক্তন সিএফও টি ভি মোহনদাস পাই।
গত মাসে নিজেদের হাতে গড়া তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটির পর্ষদকে চিঠি পাঠিয়ে কিছু সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নারায়ণমূর্তি, ক্রিস গোপালকৃষ্ণন, নন্দন নিলেকানিরা। সেখানে সিক্কার বিপুল বেতন বৃদ্ধি, বনসলকে আকাশছোঁয়া অঙ্ক-সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। একে প্রতিষ্ঠাতা, তার উপর ইনফোসিসের ১২.৭৫% অংশীদারি এঁদের পকেটে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এ চিঠি গুরুত্ব পেয়েছে। এই আক্রমণকে চড়া সুরে বেঁধে পাইয়ের প্রশ্ন, শীর্ষ কর্তাদের বেতন যে-ভাবে বাড়ছে, সেই অনুপাতে শেয়ারহোল্ডারদের রিটার্ন কোথায়?
জল ক্রমশ ঘোলা হচ্ছে দেখে এ দিন তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডাকে ইনফোসিস। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শেষাশয়ী ও সিক্কা। যেমন, শেষাশয়ীর দাবি, সিক্কার বেতন প্রায় ৪০ লক্ষ ডলার বেড়ে ১.১ কোটি ডলার হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ধরাবাঁধা মূল বেতন ৫০ লক্ষ থেকে কমে হয়েছে ৪০ লক্ষ ডলার। বাড়ানো হয়েছে বাকি অংশ, যা সংস্থায় তাঁর দীর্ঘ দিন থাকা এবং ভাল কাজের সঙ্গে যুক্ত। এ জন্য শোয়ারহোল্ডারদের সায়ও নেওয়া হয়।
সিএফও পদ ছাড়ার সময়ে বনসলকে ১৭ কোটি টাকারও বেশি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ইনফোসিস। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিষ্ঠাতারা। পাইয়ের কটাক্ষ, ভারতে কখনও সংস্থা ছাড়তে কোনও সিএফও এত টাকা পাননি। শেষাশয়ী বলেন, ‘‘প্রশ্ন যুক্তিসঙ্গত। ভবিষ্যতে এমন সম্ভাবনাও নেই।’’ তবে বনসলের মুখ বন্ধ রাখতে ওই টাকা দেওয়া হয়, এ কথা শোনা বিরক্তিকর।
এ ছাড়া, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়ন্ত সিন্হার স্ত্রীকে পর্ষদে আনা নিয়ে কথা উঠেছে। শোনা গিয়েছে পর্ষদে রাজনীতির ছোঁয়াচ প্রতিষ্ঠাতারা চাননি। শেষাশয়ীর যুক্তি, স্বামীর পরিচয় এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য নয়।
বিভিন্ন মহলের আক্রমণে পর্ষদ কতটা চাপে, এ দিন বারবার তা বোঝা যাচ্ছিল সম্মেলনে। প্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গে যে বিরোধ নেই, অজস্রবার তা বলতে হল শেষাশয়ীকে। খরচ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বোঝাতে হল, কেন সিলিকন ভ্যালিতে অফিস খুলতে হয়েছে ইনফোসিসকে। দিতে হল সিক্কার চার্টার্ড ফ্লাইট ব্যবহারের হিসাবও! তাতেও দিনের শেষে পাই প্রশ্ন তুললেন, চেয়ারম্যানের কাছে স্পষ্ট উত্তর কোথায়? এমনকী সিইও-র রাশ টেনে রাখতে পারবেন এমন চেয়ারম্যান জরুরি বলে দাবি করলেন তিনি।