প্রতীকী ছবি
গত বছরে লকডাউন এবং আমপান ঘূর্ণিঝড়ে ধাক্কা খেয়েছিল পাট উৎপাদন। যার জেরে বাজারে কুইন্টালে ৯০০০ টাকায় পৌঁছে গিয়েছিল কাঁচা পাটের দাম। সমস্যায় পড়েছিল চট শিল্প। বহু চটকল বন্ধ হওয়ায় কাজ হারিয়েছিলেন কয়েক হাজার শ্রমিক। এই অবস্থায় এ বার পাটের অধিক ফলন হওয়ায় আশা ছিল সেই সমস্যা আর হবে না। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, এই বছরেও সেই দাম বৃদ্ধির জেরে ভুগছে তারা। শিল্প মহলের অভিযোগ, এ জন্য দায়ী স্থানীয় কিছু মানুষের কাঁচা পাট মজুত করা। পরে দাম বাড়বে ভেবে এই সমস্ত মানুষ পণ্যটি জমিয়ে রাখায় বাজারে তার আকাল দেখা দিয়েছে। দাম বাড়ছে রকেট গতিতে। ফলে ভুগছে চটকলগুলি। সমস্যা না-মিটলে কাঁচা পাটের অভাবে বেশ কয়েকটি চটকল বন্ধ হতে পারে বলেও আশঙ্কা
তৈরি হয়েছে।
চট শিল্প জানাচ্ছে, জুলাই থেকে জুন মাসই হল পাটের মরসুম। এ বার জুলাই থেকেই কাঁচা পাট বাজারে আসতে থাকায় বাজারে তার অভাব মিটতে শুরু করে এবং একে একে সবকটি চটকলেই উৎপাদন পুরোদমে চালু হয়। কিন্ত অগস্ট থেকেই হঠাৎ ফের কাঁচা পাটের অভাব দেখা দিতে শুরু করেছে। অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে, ইতিমধ্যে উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে বেশ কিছু চটকল। উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়ায় রিলায়্যান্স জুটমিলে শনিবার থেকেই সপ্তাহে ৭ দিনের পরিবর্তে ৫ দিন মিল চালু রাখা হবে বলে নোটিস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
চটকল মালিকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (আইজেএমএ) চেয়ারম্যান রাঘবেন্দ্র গুপ্তের অভিযোগ, ‘‘পাট চাষ যেখানে হয়, সেই সব অঞ্চলের কিছু মানুষ চাষিদের থেকে কাঁচা পাট কিনে মজুত করতে শুরু করেছেন। উদ্দেশ্য, বাজারে কৃত্রিম ভাবে তার অভাব তৈরি করা। যাতে দাম অনেকটা বাড়ার পরে মজুত পাট বিক্রি করে অধিক মুনাফার রাস্তা খোলে। এদের মধ্যে অধিকাংশই পাট ব্যবসায়ী নন। নিজেদের পুঁজি লাগিয়েই চাষিদের থেকে পাট কিনে তা মজুত করছেন। পুরো বিষয়টি আমরা জুট কমিশনার এবং রাজ্য সরকারকে জানিয়েছি।’’
শুধু চটকলগুলিই নয়, দাম বাড়ায় সমস্যায় পড়েছেন কাঁচা পাট ব্যবসায়ীরাও। তাঁদের সংগঠন জুট বেলার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান ওম সোনি বলেন, ‘‘গত দেড় মাসেই কাঁচা পাটের দাম কুইন্টালে ৯০০ টাকা বেড়ে গিয়েছে। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬৬০০ টাকায়। ফলে সেপ্টেম্বরে সরবরাহের জন্য জুলাইয়ে পাটের আগাম লেনদেনের বাজারে যাঁরা কুইন্টালে ৫৭০০ টাকায় কাঁচা পাট বিক্রির জন্য চুক্তি করে রেখেছেন, তাঁরা এখন তা সরবরাহ করতে পারছেন না। এতে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে সকলকেই।’’
কলকাতায় জুট কমিশনারের দফতর জানিয়েছে, সমস্যাটি সম্পর্কে তারা অবহিত। বেআইনি ভাবে মজুত কাঁচা পাট উদ্ধারে শীঘ্রই অভিযানে নামা হবে। কাঁচা পাটের অভাবে চটকলগুলি যাতে সমস্যায় না-পড়ে, সে সব ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হবে। এই পরিস্থিতিতে জুট কমিশনারের দফতর এবং রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নেয়, এখন তার দিকেই তাকিয়ে চট শিল্প।