কেন্দ্রের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে আগেই। গত সপ্তাহের শেষে এ নিয়ে রাজ্য সরকারকে তাগাদা দিয়েছে তারা। কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের খবর, অবিলম্বে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি তৈরি করার জন্য রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। নতুন আবাসন আইন তৈরির জন্য বারবার আর্জি জানাচ্ছে নির্মাণ শিল্পমহলও। এই পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত সেই আইন তৈরির চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছল রাজ্য। আগামী মাসেই বিধানসভায় আসতে চলেছে আবাসন বিল।
রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, বিধানসভার আগামী অধিবেশনে বিল পেশ করা হবে। তাঁর দাবি, রাজ্যের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই নতুন আইন তৈরি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মহলেরও দাবি, কেন্দ্রীয় আইনের সার্বিক কাঠামো মানলেও কিছু কিছু রদবদল ঘটিয়েছে রাজ্য।
ক্রেতা স্বার্থরক্ষার জন্য কেন্দ্রের নতুন আবাসন আইনে বেশ কিছু জিনিসের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ক্রেতার অনুমতি ছাড়া নকশা না-বদলানো নিয়ে কড়াকড়ি, বাড়ি বিক্রির পাঁচ বছর পর্যন্ত কাঠামোগত গলদ নিখরচায় সারিয়ে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা, দাম হিসেবের ক্ষেত্রে কার্পেট এরিয়াকে মাপকাঠি ধরা ইত্যাদি। সমস্ত নতুন প্রকল্পকে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটিতে নথিভুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে সেখানেই।
মূল কথা
•
ফ্ল্যাট বা বাড়ির যে কাঠামো কিংবা নকশা অনুমোদিত হয়েছে, ক্রেতার অনুমতি ছাড়া তাতে নতুন করে কিছু সংযোজন করা যাবে না। চলবে না পরিবর্তনও
•
বাড়ির চাবি ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে কোনও কাঠামোগত গলদ ধরা পড়লে, তা বিনা পয়সায় ঠিক করে দেওয়ার দায় নিতে হবে প্রোমোটারকে
•
এ ধরনের ভুল নজরে আনার ৩০ দিনের মধ্যে তা ঠিক করে দিতেই হবে। নইলে ক্রেতাকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
•
বিক্রির সময়ে দাম ঠিক করতে কার্পেট এরিয়াই বিবেচ্য হবে। অর্থাৎ, আসলে ঠিক যতটা জায়গা বা ‘ফ্লোর এরিয়া’ ক্রেতা ব্যবহার করবেন, তার দামই গুনবেন তিনি। বাইরের দেওয়াল, লিফ্ট ইত্যাদির জায়গা ধরে ফ্ল্যাটের দাম ঠিক করা যাবে না
•
সমস্ত নতুন প্রকল্পকে অবশ্যই নথিভুক্ত হতে হবে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটির কাছে। নইলে দিতে হবে তৈরির খরচের ১০% জরিমানা
তাই দেরিতে হলেও এই আইন তৈরিতে রাজ্য উদ্যোগী হওয়ায় তাতে স্বস্তি প্রকাশ করেছে এখানকার নির্মাণ শিল্পমহল। ক্রেডাইয়ের দাবি, আইন নিয়ে ধোঁয়াশা না-কাটলে, নতুন প্রকল্প পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়। কারণ কেন্দ্রীয় আইন দিশা দেখালেও নিয়মকানুন তৈরির দায় রাজ্যের। ফলে তা শেষ পর্যন্ত কতটা কড়া হবে, তা রাজ্যের উপর নির্ভর করবে বলেই মনে করছে আবসন শিল্প।
তাদের একাংশের মতে, সময়ে আইন চালু না-হওয়ায় এমনিতেই নতুন প্রকল্পে হাত দেওয়ার সংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে। উপদেষ্টা সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্কের সমীক্ষা অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম ছ’মাসের তুলনায় ২০১৭ সালের ওই একই সময়ে কলকাতায় নতুন প্রকল্প ১৮% কমেছে। যার মূল কারণ রাজ্যে নতুন আবাসন আইন এখনও তৈরি না হওয়া। সঙ্গে জিএসটি-জুজু।
কেন্দ্রের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন প্রকল্পগুলিকে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটিতে নথিভুক্ত হতেই হবে। নইলে প্রকল্পের ১০% খরচ জরিমানা হিসেবে দিতে হবে। কিন্তু এ রাজ্যে এখনও অথরিটি না-হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
নতুন আইনের অপেক্ষায় কমেছে বিক্রিও। তা পড়েছে ২২%। ক্রেডাইয়ের মতে, ক্রেতারা নতুন আইনের সুবিধা পাওয়ার আশায় কেনার সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দিচ্ছেন। শহরে এখন পড়ে থাকা ফ্ল্যাটের সংখ্যা ৩৯,১১৪। যা বিক্রি হতে লাগবে অন্তত আড়াই বছর। ফলে সমস্যায় পড়তে হয়েছে আবাসন শিল্পকে।