দু’টি কারখানাই বন্ধ। আট মাস বেতন পাচ্ছেন না কর্মীরা। সময় লাগবে পুনরুজ্জীবনে। এই অবস্থায় আপাতত উৎপাদন চালু করতে বেসরকারি সংস্থার হাত ধরার কথা ভাবছে হিন্দুস্তান পেপার কর্পোরেশন।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির দাবি, এই মুহূর্তে তাদের হাতে বরাত রয়েছে। কিন্তু কারখানা চালানোর মতো কার্যকরী মূলধন নেই। সেই কারণেই আপাতত বেসরকারি সংস্থাকে উৎপাদনের দায়িত্ব দেওয়ার ভাবনা। ওই সংস্থা হিন্দ পেপারের কর্মীদের দিয়েই কাজ করাবে। কিন্তু কার্যকরী মূলধন ঢালবে নিজেরা। তৈরি কাগজ তারা বিক্রিও করবে। এ বিষয়ে সহায়তা করবে হিন্দ পেপার। মুনাফা ভাগাভাগি হবে দুই সংস্থার মধ্যে। তবে পরে হিন্দ পেপারের পুরোদস্তুর বেসরকারিকরণের পরিকল্পনা আছে কি না, সে বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি সংস্থাটির সিএমডি শশী কান্ত জৈন।
হিন্দ পেপারকে চাঙ্গা করতে ১,৩০০ কোটি টাকার পরিকল্পনা এক বছর আগে ভারী শিল্প মন্ত্রকের কাছে জমা দেন কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রকের নির্দেশ মেনে সংশোধনের পরে সেটিকে ফের দিন দশেক আগে জমা দেওয়া হয়েছে। জৈনের দাবি, পরিকল্পনায় কর্মীদের বকেয়া মেটাতে আর্থিক সংস্থান করা হয়েছে। কাউকে ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনাও নেই। কর্তৃপক্ষের ধারণা, দু’টি কারখানা আধুনিকীকরণে ৫০০ কোটি মতো খরচ হবে। আশা, মাস দেড়েকের মধ্যেই পরিকল্পনার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
জৈনের কথায়, ‘‘সংস্থাকে চাঙ্গা করতে যে-সমস্ত পরিকল্পনা আছে, কারখানা দু’টিতে উৎপাদনের ভার আপাতত বেসরকারি হাতে দেওয়া তার মধ্যে অন্যতম। তবে বতর্মান কর্মীদের দিয়েই উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া নিয়ে চুক্তি হবে।’’ পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা খাতে পাওয়া টাকা দিয়ে আধুনিকীকরণের কাজ শুরুরও পরিকল্পনা রয়েছে। যেমন, মান্ধাতার আমলের যন্ত্র, বয়লার বদলানো হবে।
আরও পড়ুন: চাকরি-রোজগার নেই, তোপ সঙ্ঘের মঞ্চেরই
সংস্থার যাবতীয় প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও দীর্ঘ দিন বেতন না-পেয়ে কর্মীরা ক্ষুব্ধ। হিন্দ পেপার অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সমীর রায় ও এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এ বি পাত্র বলেন, ‘‘কাছারের কর্মীরা ৮ মাস বেতন পাননি। নওগাঁওয়ের কর্মীরা ৬ মাস।’’
কিন্তু ২০০৮ সাল পর্যন্ত মুনাফা করা সংস্থাটির এমন হাল হল কেন?
জৈন বলেন, কাগজ তৈরির প্রধান দু’টি কাঁচামাল বাঁশ ও কয়লা। ২০০৯-’১০ সালে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাঁশে মড়ক লাগে। ২০১৩ সালে বাঁশের জোগান স্বাভাবিক হয়। কিন্তু ওই সময়ে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল মেঘালয়ে কয়লা উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যেখান থেকে হিন্দ পেপারে কয়লা আসত। কাছার ও নওগাঁওয়ে সড়ক এবং রেল যোগাযোগ ভাল না-থাকায় অন্য জায়গা থেকে কয়লা আনাও সম্ভব হয়নি। এই সমস্ত কারণেই উৎপাদন ব্যাহত হয়। টান পড়ে আয়ে। কর্মীদের অবশ্য অভিযোগ, অদক্ষ পরিচালনাই সমস্যার মূল কারণ।
এক নজরে
• এক সময়ের জনপ্রিয় কাগজের ব্র্যান্ড। পকেটে মিনিরত্নের তকমা
• দু’টি কারখানা অসমের কাছার ও নওগাঁওয়ে। সদর কলকাতায়
• কাছারের কারখানা ২০১৫ সালের অগস্ট থেকে বন্ধ। নওগাঁওয়েরটি বন্ধ মার্চ থেকে
• দু’টি কারখানাতেই ৭৫০ জন করে কর্মী। জনা পঞ্চাশ সদর দফতরে
• বেতন বন্ধ ১,৬০০ কর্মীরই