অ্যালেক্সিস সিপ্রাস। ছবি: এএফপি।
আর্থিক ত্রাণ প্রকল্পে সায় দিয়ে সরকারি খরচ কাটছাঁট করা, কর বাড়ানোর পথে হাঁটা, নাকি ইউরোপ থেকে বেরিয়ে যাওয়া— এই নিয়েই উভয়সঙ্কটে গ্রিস। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা মেনে এই পরিস্থিতিতে ত্রাণ প্রকল্প নিয়ে আগামী ৫ জুলাই গণভোটের সিদ্ধান্ত নিলেন সে দেশের বামপন্থী প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাস। পাশাপাশি, জানিয়ে দিলেন, তিনি এই ‘অসহনীয়’ ত্রাণ প্রকল্পের বিপক্ষে।
কিছুটা নাটকীয় ভাবেই সিপ্রাস এই গণভোট ঘোষণা করায় এবং কার্যত ত্রাণ প্রকল্পের বিরুদ্ধেই ভোট দিতে জনগণকে আর্জি জানানোয় হতাশ ইউরোপ এবং গ্রিসের অন্যতম ঋণদাতা আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (আইএমএফ)। ইউরোপীয় গোষ্ঠী বা ইউরোগ্রুপের প্রধান জেরোয়েন ডিজসেলব্লোয়েম বলেন, ‘‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক সিদ্ধান্ত। এর ফলে বিষয়টি নিয়ে রফায় আসতে আলোচনার দরজা কার্যত বন্ধ হয়ে গেল।’’
গ্রিসের আর্থিক সঙ্কট আরও ঘোরালো হয়ে ওঠায় সিপ্রাস অবশ্য বলেছেন, ‘‘জনসাধারণের উপর বিপুল বোঝা চাপাবে এই ত্রাণ প্রকল্প। তাঁরা তা মেনে নেবেন কি না, এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে সেই রায় দিতে হবে গ্রিক জনগণকেই।’’ উল্লেখ্য, করের বোঝা কমানো, ছাঁটাই না-করা ইত্যাদি প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় আসেন সিপ্রাস।
প্রসঙ্গত, গ্রিসের মোট ২৪ হাজার কোটি ইউরোর বিপুল ত্রাণ প্রকল্পে দফায় দফায় ঋণ দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন সদস্য দেশ, ইউরোপীয় শীর্ষ ব্যাঙ্ক এবং আইএমএফ। কিন্তু আগামী মঙ্গলবার ৩০ জুন আইএমএফকে ১৫৫ কোটি ইউরো মেটাতে হবে গ্রিসকে। জুলাইয়ে শোধ করতে হবে আরও বড় অঙ্ক। ফলে ঋণদাতাদের কাছ থেকে এই মুহূর্তে ৭২০ কোটি ইউরোর আর্থিক ত্রাণ না-পেলে এই অর্থ মেটানো গ্রিসের পক্ষে সম্ভব নয়।
গ্রিসের প্রায় দেউলিয়া হয়ে যাওয়া অর্থনীতিকে বাঁচাতে এই কারণেই আগামী ৫ মাসে ১২০০ কোটি ইউরো (৮৫,৭৬০ কোটি টাকা) দেওয়ার প্রস্তাব এনেছে ইউরোপ। তার মধ্যে ১৮০ কোটি তারা এখনই দিতে রাজি। কিন্তু আর্থিক ত্রাণ বাবদ এই অর্থ পেতে হলে কিছু কড়া শর্ত মেনে চলতে হবে গ্রিসকে, যার মধ্যে রয়েছে: পেনশন কমানো, যুক্তমূল্য কর বাড়ানো, শ্রম আইন সংস্কার ইত্যাদি। সেই কারণেই প্রকল্প মেনে না-নিয়ে গণভোটের সিদ্ধান্ত। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা ত্রাণের অর্থ না-পেলে শীঘ্রই নগদের অভাবে সরকারি খরচ মেটাতে পারবে না গ্রিস। শেষ পর্যন্ত যার জেরে ইউরোপ থেকে বেরিয়ে যেতে হতে পারে দেউলিয়া গ্রিসকে।