‘ত্রাসের দাসত্ব।’
ঋণদাতারা এটাই তৈরি করতে চাইছে বলে গণভোটের ঠিক আগের দিন শনিবার আইএমএফ এবং বাদবাকি ইউরোপীয় দেশগুলির প্রতি কটাক্ষ করলেন গ্রিসের অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভারুফাকিস। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে গ্রিসের ১৮টি সহযোগী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও পাল্টা দাবি করা হয়েছে যে, গ্রিস ইউরোপীয় অঞ্চল থেকে বেরিয়ে গেলে তাদের কিছু এসে যাবে না। কারণ ইউরোপীয় জোটের মোট জাতীয় আয়ের মাত্র ২ শতাংশ গ্রিসের অবদান। অর্থমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আমরা ইউরো অঞ্চল থেকে বেরিয়ে গেলে ১ লক্ষ কোটি ইউরো (৭০ লক্ষ কোটি টাকা) হারাতে হবে ইউরোপকে, যা তাদের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব বলে আমার মনে হয় না।’’
অর্থমন্ত্রী জানান, দাসত্ব মেনে নেবে না বলেই গ্রিস সরকার ত্রাণ প্রকল্পে সায় দেয়নি। গ্রিক জনগণকেও তাই গণভোটে আর্থিক ত্রাণ প্রকল্পের বিরোধিতা করে ‘না’ ভোট দিতে আর্জি জানিয়েছেন তিনি। তিন ঋণদাতা আইএমএফ, ইউরোপীয় শীর্ষ ব্যাঙ্ক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাকি দেশগুলি সম্পর্কে ভারুফাকিস অভিযোগ এনে বলেন, ‘‘এরা যা করছে, তার একটাই নাম— সন্ত্রাস।’’ এই ঋণদাতারাই গ্রিস সরকারকে ৬ জুলাই পর্যন্ত ব্যাঙ্ক বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছে বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। তাঁর মতে এর পিছনে একমাত্র কারণ ‘ভয় দেখানো’, যাতে কড়া শর্তে ত্রাণ প্রকল্প মেনে নিতে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেন সিংহভাগ গ্রিস নাগরিক। গ্রিকদের অপমান করতেই এই কৌশল বলে তাঁর অভিযোগ। প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাসও একই সুরে জনগণের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘এই ‘না’ ভোট দেওয়ার মানে হল কোনও হুমকি মেনে না-নেওয়া, ‘সন্ত্রাস’-এর যোগ্য জবাব দেওয়া।’’
উন্নত দুনিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে আইএমএফের খাতায় ঋণখেলাপি বলে নাম উঠেছে গ্রিসের। মঙ্গলবারের সময়সীমার মধ্যে ১৬০ কোটি ডলার আইএমএফ ঋণ ফেরত দিতে পারেনি অর্থ সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা গ্রিস। আর্থিক সংস্কারের পথে না-হেঁটে ত্রাণ প্রকল্পের বিপক্ষে ‘না’ ভোট দিলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে হতে পারে ঋণের দায়ে প্রায় দেউলিয়া গ্রিসকে। সরকারের ভাঁড়ার ফাঁকা, নগদের অভাবে ব্যাঙ্ক বন্ধ, থমকে শেয়ার লেনদেন, ক্ষুব্ধ পেনশনপ্রাপকরা সরকারের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত। এই পরিপ্রেক্ষিতেই আগামী কাল গণভোট হতে চলেছে গ্রিসে, যার ফল প্রকাশিত হওয়ার কথা সোমবার।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাদবাকি দেশগুলি এ প্রসঙ্গে জানিয়েছে, গ্রিস জোট থেকে বেরিয়ে গেলে আর্থিক ভাবে তাদের ক্ষতি হবে না। কিন্তু ধাক্কা খাবে ইউরোপের ভাবমূর্তি। কারণ ১৯টি দেশের জোট তৈরিই হয়েছিল এই লক্ষ্যে, যাতে সেখান থেকে কেউ বিচ্ছিন্ন না-হয়।