নোটবন্দিতে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল গয়না শিল্পকে। কাজ হারিয়ে তখন ভিন্ রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন সোনার অনেক কারিগর। সেই সমস্যা কাটতে-না-কাটতেই দীর্ঘ দিন অনিশ্চয়তা জারি ছিল জিএসটি বসানো নিয়ে। মাঝে এক সময় একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের বেশি টাকার গয়না কিনলে প্যান দাখিলের কড়াকড়ি নিয়েও অখুশি ছিল গয়না শিল্প। আর হালে তাদের মাথাব্যথার কারণ ডলারের দাম তেড়েফুঁড়ে বাড়তে থাকা। কারণ, তাতে সোনা আমদানির খরচ গিয়েছে বেড়ে। একের পর এক সমস্যার এই দীর্ঘ সুড়ঙ্গ শেষে আলোর দেখা পেতে এখন আলোর উৎসবের দিকেই তাকিয়ে গয়না শিল্প। প্রথমে ধনতেরস এবং তার পরে শুরু হওয়া বিয়ের মরসুমে ভাল বিক্রিবাটার হাত ধরে লাভের লক্ষ্মী ঘরে তোলার আশায় বুক বাঁধছে তারা।
সেই পথও যে পুরো মসৃণ নয়, তার আঁচ পেয়েছে সোনার বাজার। এই শিল্পের সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত ব্যবসায়ীরা মানছেন, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় সোনার দাম এ বার বেশি। চাহিদাও এখনও পর্যন্ত কিছুটা কম। কিন্তু ধনতেরস সমেত সামনের উৎসবের মরসুম ও বিয়ের কেনাকাটার দৌলতে তা শীঘ্রই পুরোপুরি চাঙ্গা হবে বলে আশাবাদী তাঁরা।
সোনার কারবারিদের দাবি, এক বছরে সোনার দাম প্রতি কিলোগ্রামে বেড়েছে ১.৮ লক্ষ টাকার মতো। তার ছেঁকায় ধনতেরসের কেনাবেচার পরিমাণ সামান্য কম হওয়ার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা। কিন্তু তেমনই তাঁদের দাবি, সাধারণত ধনতেরসের দিন চারেক আগে থেকে বাজার চাঙ্গা হয়। এ বারও শনিবার থেকে ক্রেতারা ধীরে ধীরে আসতে শুরু করেছেন। তাই সোমবার ধনতেরসের কেনাকাটা আগের বছরের থেকে কম হলেও, একেবারে হতাশাজনক হবে না বলে তাঁদের আশা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধনতেরসে সোনা কেনায় আগ্রহ এখন আর শুধু অবাঙালিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। অনেক দিন ধরেই তাতে পুরোদস্তুর সামিল বাঙালিরা। কিন্তু এ বার সেই কেনাকাটায় বড় বাধা ডলারের দর বৃদ্ধির দরুন সোনার চড়া দাম।
স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে বলেন, ‘‘এ বছর সাধারণ ভাবেই সোনার চাহিদা কম। তার দাম বাড়া বাজার চাঙ্গা হওয়ার পথে বড় অন্তরায়। গত বছর এই সময়ে ১০ গ্রাম পাকা সোনা ছিল ৩০,৬০০ টাকার আশেপাশে। এখন দর বেড়ে হয়েছে ৩২,২৬০ টাকা।’’ তবে তাঁর এবং অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ট্রেড ফেডারেশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাছরাজ বামালুয়ার আশা, ‘‘সোমবারের মধ্যে বাজার জমবে।’’
তাঁদের যুক্তি, ‘‘নভেম্বর থেকে বিয়ের ভরা মরসুম। ধনতেরসের সময়ে চালু প্রকল্প ও সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিয়ের গয়নার বাজারও সেরে রাখেন অনেকে।’’ অঞ্জলি জুয়েলার্সের ডিরেক্টর অনর্ঘ চৌধুরী বলেন, ‘‘এখন ডলারের দাম কিছুটা কমেছে। পরে ফের তা বাড়লে, সোনার দরও চড়বে।’’ তা মাথায় রেখেও অনেক ক্রেতা বাজারে আসতে শুরু করছেন বলে মনে করছেন গয়না ব্যবসায়ীরা।
তবে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব হলমার্কিং সেন্টার্সের সভাপতি হর্ষদ অজমেঢ়ার মতে, গাঁটের কড়ি খরচ করে গয়না কেনার আগে অন্তত ছ’সাতটি বিষয় (সঙ্গের সারণিতে) খেয়াল রাখা উচিত ক্রেতাদের।