বিশ্ব বাজারে পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নীচে নেমে গেল সোনার দাম। সোমবার লেনদেন চলাকালীন প্রতি ট্রয় আউন্স সোনার (৩১.১ গ্রামের বার) দর তলিয়ে গেল ১,১০০ ডলারেরও নীচে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মূহূর্তে আন্তর্জাতিক বাজারে উপচে পড়ছে সোনার জোগান। সঙ্গে দাম বাড়ছে ডলারের। আর মূলত এই দুই কারণেই এতখানি নেমে গিয়েছে ওই গয়নার ধাতুর দর। যার স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে কলকাতা-সহ ভারতের বাজারেও। এ দিনই যেমন শহরে প্রতি ১০ গ্রাম পাকা (২৪ ক্যারাট) সোনার মূল দাম দাঁড়িয়েছে ২৫,৬৬০ টাকা। শনিবারের তুলনায় ৩৭০ টাকা কম।
দেখা যাচ্ছে, সম্প্রতি ৩৩ হাজার কিলোগ্রাম সোনা বিক্রি করেছে চিন। বেহাল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সোনা বিক্রির জন্য আইএমএফের কাছে অনুমতি চেয়েছে গ্রিসও। আর এই উপচে পড়া জোগানের খবর বিশ্ব বাজারে টেনে নামিয়েছে সোনার দরকে। এই পতনে ইন্ধন জুগিয়েছে ডলারের দর বাড়াও।
ধীরে হলেও ক্রমশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মার্কিন অর্থনীতি। তার উপর সেখানে শীঘ্রই সুদ বাড়ানোর কথা বলেছে আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ। ফলে সব মিলিয়ে দর বাড়ছে ডলারের। স্বাভাবিক ভাবেই সোনার থেকে লগ্নি সেখানে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অনেক বিনিয়োগকারী। তাই সোনার দর কমছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনিতেই ডলারের দাম কিংবা ব্যাঙ্কে সুদ বা়ড়লে, সোনায় লগ্নিতে ভাটা পড়ে। তার উপর যদি খোদ ফেড রিজার্ভই সুদ বৃদ্ধির কথা বলে, তাহলে যে তার প্রভাব সোনার দামে পড়বে, সেটাই স্বাভাবিক।
সোনার দর অবশ্য কমছে বেশ কয়েক দিন ধরেই। গত এক মাসে সোনার দাম কমেছে ৮ শতাংশ। সোনা ব্যবহারের নিরিখে ভারত বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলির মধ্যে থাকলেও, সোনার দাম কিন্তু নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠা-নামার উপর। তাই বিশ্ব বাজারের হাত ধরে সোনার দর কমেছে এই দেশেও। অনেকে মনে করছেন, এর দৌলতে তৈরি হয়েছে সোনা কেনার সুবর্ণ সুযোগ। গত শনিবার রথের দিনই ছিল মল মাসের শেষ। সামনেই বিয়ের মরসুম। ফলে এখন দাম কমায় খুশি অনেকেই। তবে স্বর্ণ ব্যবসায়ীমহলেরও দাবি, ইতিমধ্যেই প্রায় তলানিতে ঠেকেছে সোনার দর। ফলে আগামী দিনে আর খুব একটা তা নামার সম্ভাবনা কম।
জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান পঙ্কজ পারেখ জানান, ‘‘আন্তর্জাতিক বাজারে গত ২৩ জুন প্রতি ট্রয় আউন্স সোনা ছিল ১,১৯৩.৭০ ডলার। গত শনিবার তা নেমে এসেছে ১,০৯৩ ডলারে। সোমবারও তা ঘোরাফেরা করেছে ১,১০৪ থেকে ১,১১৭ ডলারের মধ্যে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সোনার দর ‘‘১,০৮০ ডলারের নীচে নামবে না। কারণ, ৩১.১ গ্রামের ওই সোনার বার তৈরির খরচই ১,০৮০ ডলার।’’
বরং দাম কমায় সোনার চহিদা এ বার বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে বলেন, ‘‘২০১৩ সালের শেষ দিকে প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট সোনার দাম উঠে গিয়েছিল ৩৩,০০০ টাকায়। সোমবার তা হয়েছে ২৫,৬৬০ টাকা। অর্থাৎ, দু’বছরেরও কম সময়ে দাম কমেছে প্রায় ৩৯ শতাংশ। বিশ্ব বাজারের জেরে দাম (প্রতি ১০ গ্রামে) হয়তো আরও ২৫০-৩০০ টাকা কমবে। কিন্তু মল মাস কেটে বিয়ে ও উৎসবের মরসুম শুরু হওয়ায় তা কিছুটা বাড়তেও পারে।’’ ফলে এখনই সোনা কেনার সুবর্ণ সুযোগ বলে মনে করছেন তিনি।
আজকের দর: গয়নার সোনা
কলকাতা-২৪,৫৪০
দিল্লি-২৪,৪৬০
মুম্বই-২৪,৪৪০
চেন্নাই-২৪,৫০০