গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
লগ্নিতে ভাটার টান। কারখানা উৎপাদনের দুর্বল ছবি। এর জেরে চলতি অর্থ বছর, অর্থাৎ ২০২৪-২৫-এ আর্থিক বৃদ্ধির হার মাত্র ৬.৪ শতাংশেই আটকে যাবে বলে জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর পূর্বাভাস করল। কোভিড অতিমারির ধাক্কার পরে গত চার বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার এতখানি কমেনি। গত অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ছিল ৮.২ শতাংশ। পূর্বাভাস অনুযায়ী সেখান থেকে এক ধাক্কায় বৃদ্ধির হার অনেকটাই কমছে।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তার আগে আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে সরকারি পরিসংখ্যান দফতরের এই পূর্বাভাসের অর্থ, অর্থনীতির ইঞ্জিনে জ্বালানি কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আর্থিক বৃদ্ধির গতি বাড়াতে নির্মলাকে তাই বাজেটে নতুন রাস্তা খুঁজতে হবে। কারণ, শিল্পমহলের লগ্নিতে বৃদ্ধির হারও মাত্র ৬.৪ শতাংশ। গত অর্থ বছরের ৯ শতাংশের তুলনায় অনেকটাই কম। এই পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্তের কেনাকাটা বাড়াতে আয়করের বোঝা কমানোর দাবি উঠেছে। পাশাপাশি সরকারি খরচের হার বৃদ্ধি কিছুটা আশা দেখাতে পারে বলে মনে করছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞরা।
পরিসংখ্যান দফতরের প্রথম পূর্বাভাসটি কেন অর্থমন্ত্রীর পক্ষে চিন্তার? বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, তৃতীয় বার মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে, গত জুলাইয়ে বাজেট পেশের সময়ে নির্মলা মূল্যবৃদ্ধি-সহ আর্থিক বৃদ্ধির হার ১০.৭% ধরে নিয়ে অঙ্ক কষেছিলেন। পূর্বাভাস বলছে, বাস্তবে এই বৃদ্ধির হার ৯.৫ শতাংশে আটকে যাবে। চলতি বছরে জিডিপি যেখানে পৌঁছবে বলে অর্থমন্ত্রীর ধারণা ছিল, বাস্তবে তার থেকে কম হবে। ফলে বাজেটের রাজকোষ ঘাটতির হার-সহ কিছু অনুমান মিলতে না-ও পারে। শুধু মাত্র খরচ কম হলে তবেই ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতে পারে। এই সবের যোগফল একটাই, তাঁর বাজেটের হিসাবও জট পাকিয়ে যেতে পারে।
এই অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার যে কম হতে পারে, তার আশঙ্কা গোড়া থেকেই ছিল। গত বছরের আর্থিক সমীক্ষায় ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, এই অর্থ বছরে বৃদ্ধির হার ৬.৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে থাকবে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বৃদ্ধির হার ৬.৬ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস করেছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বৃদ্ধির হার তার থেকেও কমতে পারে। এর আগে সরকারি পরিসংখ্যানেই জানা গিয়েছিল, গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে বৃদ্ধির হার মাত্র ৫.৪ শতাংশে নেমে এসেছে। সাতটি ত্রৈমাসিকে সর্বনিম্ন। তার পিছনে অন্যতম কারণ ছিল, কারখানার উৎপাদন কমে যাওয়া। আজকের পূর্বাভাসে ইঙ্গিত, কারখানার উৎপাদনে বৃদ্ধির হার গত বছরের ৯.৯ শতাংশ থেকে এ বছর মাত্র ৫.৩ শতাংশে নেমে আসছে। বছরের প্রথমার্ধে শ্লথ গতি কাটিয়ে দ্বিতীয়ার্ধেও অর্থনীতির ইঞ্জিন খুব বেশি জোরে ছুটতে পারেনি।
সম্প্রতি বাজারে কেনাকাটা কমে যাচ্ছে বলেও শিল্পমহল আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। মোদী সরকারের জন্য কিছুটা স্বস্তির কথা হল, পূর্বাভাস বলছে, বেসরকারি কেনাকাটার খরচে বৃদ্ধির হার এ বার ৭.৩ শতাংশ ছোঁবে। গত বছরের ৪ শতাংশের তুলনায় বেশি। সরকারি খরচে বৃদ্ধির হারও বেড়েছে। কৃষি ক্ষেত্রেও বৃদ্ধির হার গতবারের তুলনায় ভাল। পরিষেবা ক্ষেত্রেরও একই ছবি। কিন্তু ব্যবসা, হোটেল, পরিবহণ, আবাসন, আর্থিক পরিষেবার মতো সব ক্ষেত্রেই বৃদ্ধির হার কমছে। তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেনাকাটা বাড়াতে মধ্যবিত্তের আয়করের বোঝা কমানোরও দাবি উঠেছে।