GDP

সঙ্কোচনে বিস্ময় নেই, ঘুরে দাঁড়ানোই আসল চ্যালেঞ্জ

২০২০-২১ সালে ভারতের বৃদ্ধির হার শূন্যের ৫ শতাংশ বিন্দু নীচে নেমে যাবে বলে পূর্বাভাস অনেকেরই।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২০ ০৩:২৫
Share:

—প্রতীকী ছবি

শূন্যের নীচে তলিয়ে যাওয়া বৃদ্ধির হার কিংবা গত বছরের তুলনায় কমে যাওয়া জিডিপি। শিরদাঁড়ায় কাঁপুনি ধরানো অর্থনীতির এই পরিসংখ্যান হয়তো সংবাদমাধ্যমে ‘ব্রেকিং নিউজ়’ হওয়ার উপযুক্ত। উপাদেয় চায়ের কাপে তুফান তোলা আলোচনায়। কিন্তু বিধ্বস্ত বিশ্ব অর্থনীতি আর দেশ জোড়া লকডাউনের প্রেক্ষাপটে অঙ্কের সরল হিসেবেই তা প্রত্যাশিত। তাই অন্তত এর মধ্যে প্রতি বার নতুন করে আশঙ্কা খোঁজার বিরোধী বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এই প্রবল অনিশ্চয়তায় দাঁড়িয়ে আগামী বছরের বৃদ্ধির পূর্বাভাস এখনই কতটা দেওয়া সম্ভব, সে বিষয়েও সন্দিহান তাঁরা।

Advertisement

২০২০-২১ সালে ভারতের বৃদ্ধির হার শূন্যের ৫ শতাংশ বিন্দু নীচে নেমে যাবে বলে পূর্বাভাস অনেকেরই। তা সামনে এনে আরও বেশি সরকারি সুবিধার প্রত্যাশী কর্পোরেট দুনিয়া। কিন্তু টানা দু’মাসেরও বেশি যেখানে উৎপাদন প্রায় বন্ধ, তা স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ আরও কয়েক মাস, সেখানে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি কি আগের বছরের তুলনায় কম হওয়াই স্বাভাবিক নয়? নাকি তা সত্ত্বেও তাকে ঘিরে শোরগোল অর্থনীতির ভাল-মন্দের মাপকাঠি শুধু বৃদ্ধির হার হয়ে ওঠায়?

লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সের অধ্যাপক মৈত্রীশ ঘটকের কথায়, ‘‘কিছু নির্দিষ্ট পরিসংখ্যানের প্রতি অনেকের একটা বাড়তি ঝোঁক আছে। বৃদ্ধির হার তার অন্যতম। ‘বৃদ্ধি’ শব্দটি সব সময়ে এত বেশি ব্যবহার হয়, যে আমরা তাতে একটু বেশিই অভ্যস্ত। তাই এই কঠিন সময়েও তা পিছু ছাড়ছে না। কিন্তু বৃদ্ধি নয়, এখন অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোই প্রথম চ্যালেঞ্জ। যখন (করোনা-পর্বের) আগের জিডিপি-তে ফিরতে পারব, অর্থাৎ নিট বৃদ্ধি ০% হবে, তখন থেকে না-হয় তার হারের অঙ্ক আবার কষা যাবে।’’

Advertisement

আশঙ্কার বার্তা

সংস্থা পূর্বাভাস
• গোল্ডম্যান স্যাক্স ↓ ৫
• এস অ্যান্ড পি ↓ ৫
• ক্রিসিল ↓ ৫
• ফিচ রেটিংস ↓ ৫
• ফিচ সলিউশনস ↓ ৪.৫
• ইকোর‌্যাপ ↓ ৬.৮
(২০২০-২১ অর্থবর্ষে জিডিপি সঙ্কোচনের পূর্বাভাস শতাংশে। সঙ্কোচনের ইঙ্গিত দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-ও)

কোনও দেশের জিডিপি আগের বছরের তুলনায় কত শতাংশ বেড়েছে, তা-ই তার বৃদ্ধির হার। দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অধ্যাপক দিব্যেন্দু মাইতির কথায়, “রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ সালে ভারতের জিডিপি-তে পরিষেবা, উৎপাদন শিল্প এবং কৃষি ক্ষেত্রের অবদান যথাক্রমে ৬২, ২৩ এবং ১৪ শতাংশ। লকডাউনের সময়ে ব্যাঙ্কিং, টেলিকম, স্বাস্থ্যের মতো কিছু ক্ষেত্র ছাড়া বাকি পরিষেবা বন্ধ ছিল। অধিকাংশ কল-কারখানায় উৎপাদন কার্যত হয়নি। চাষের কাজ হলেও তালাবন্ধ ছিল কৃষিপণ্য শিল্প। আগামী কয়েক মাসেও উৎপাদনের ইঞ্জিন পুরোদমে চালু হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই এই অবস্থায় জিডিপি যে আগের বারের তুলনায় কমবে, তা আর আশ্চর্যের কী?’’

জেএনইউয়ের অধ্যাপক জয়তী ঘোষের মতে, ‘‘একমাত্র অত্যাবশ্যক পণ্য বাদে বাকি সব কিছুর বিক্রিবাটা যদি টানা এত দিন বন্ধ থাকে, তার ছাপ তো জিডিপি-র উপরে পড়বেই। বিশেষত যেখানে লকডাউন ওঠার পরেই চট করে চাহিদার মাথা তোলার সম্ভাবনা কম। টাকা ঢালতে তেমন আগ্রহী নন লগ্নিকারীরা। খরা রফতানির বাজারেও।’’ তাই চলতি বছরে বৃদ্ধির হার শূন্যের নীচে নেমে যাওয়া চমকে দেওয়ার খবর নয় বলে স্পষ্ট জানাচ্ছেন তিনি।

কিন্তু তাহলে যে আগামী বছরের পূর্বাভাস দিচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা? এই প্রবল অনিশ্চয়তায় তা কতটা সম্ভব, সে বিষয়ে সন্দিহান অনেকে। নীতি আয়োগের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানাগড়িয়া মনে করেন, বাজারে চাহিদা ফিরতে পারে প্রত্যাশার তুলনায় অনেক দ্রুত। আবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন মনে করেন, অর্থনীতির জখম সারতে সময় লাগবে দীর্ঘ দিন। দিব্যেন্দুও বলছেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরে যাওয়ায় ছিঁড়ে যাওয়া জোগান-শৃঙ্খল কবে ফের জোড়া লাগবে, বলা শক্ত। কাজের বাজারে ছাঁটাই বাড়তে থাকলে, আরও কমবে চাহিদা। আবার করোনার প্রতিষেধক কিংবা ওষুধের সন্ধান মিললে কিংবা মানুষ কেনাকাটায় আগ্রহ দেখালে ছবি হতে পারে অন্যরকম।’’

মৈত্রীশও বলছেন, ‘‘আমার মনে হয় না, আগামী বছরের বৃদ্ধির পূর্বাভাস এখনই দেওয়া সম্ভব। এটা অনেকটা অন্ধকারে তির ছোড়ার মতো। কিছু সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানকে রুটিন মাফিক যান্ত্রিক ভাবে এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে যেতে হয়। তার কিছু ধরা-বাঁধা ফর্মুলাও আছে। তাই এখন প্রকাশিত ওই সমস্ত পূর্বাভাস পরে সত্যিই কতটা মিলল, তাতে নজর রাখলে এই সমস্ত ‘ভবিষ্যৎবাণী’র জোর টের পাওয়া যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement