হাতে হাত। ফডণবীস ও টেরি। মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই
ভারতে নতুন কারখানা গড়তে আগামী পাঁচ বছরে ৫০০ কোটি ডলার লগ্নি করছে তাইওয়ানের ফক্সকন। সরবরাহের বরাত নিয়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় অ্যাপল ফোন তৈরি করে বিশ্বের প্রথম সারির বৈদ্যুতিন পণ্য সংস্থার তালিকায় উঠে এসেছে ফক্সকন। সংস্থার গ্রাহক তালিকায় ব্ল্যাকবেরি, জিয়াওমি, অ্যামাজনের মতো সংস্থাও রয়েছে। বরাত নিয়ে অন্য সংস্থার হয়ে পণ্য তৈরিতে বিশ্বে প্রথম স্থানটিও দখল করেছে ফক্সকন। মহারাষ্ট্রে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকায় বৈদ্যুতিন পণ্য কারখানা গড়তে শনিবার সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান টেরি গোউ চুক্তি সই করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের সঙ্গে।
এ বছরের গোড়ায় ফেব্রুয়ারিতে চেন্নাইয়ের কারখানা বন্ধ করে ভারত ছাড়তে বাধ্য হয় ফক্সকন। সেখানে শুধুই নোকিয়ার হয়ে ফোন তৈরি করত তারা। নোকিয়া শ্রীপেরুমপুদুরের কারখানা গুটিয়ে নেওয়ার পরে ফক্সকনের হাতে আর কোনও বরাত ছিল না। তারপর এ দিনই লগ্নির ঝাঁপি নিয়ে ভারতে ফিরে আসার কথা ঘোষণা করল তারা। ফডণবীস জানান, মহারাষ্ট্রে এটিই একক ভাবে সবচেয়ে বড় মাপের বিদেশি লগ্নি প্রস্তাব। ভারতেও এটি অন্যতম বৃহৎ বলে দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের। শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ টানতে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের মেক ইন ইন্ডিয়া ও ডিজিটাল ইন্ডিয়া কর্মসূচি ঘোষণার পরেও ফক্সকনের মতো এত বেশি লগ্নির প্রতিশ্রুতি কোনও বিদেশি সংস্থা দেয়নি বলে সরকারি সূত্রের খবর।
পুণের কাছে ১৫০০ একর জুড়ে এই কারখানা গড়ে উঠবে বলে জানান ফডণবীস। রাজ্য সরকার পুণের তালেগাঁওয়ের কাছে ৯০০ একর জুড়ে কারখানাটি গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে। কাছেপিঠেই দ্বিতীয় একটি জায়গায় ৬০০ একরের উপর গড়ে ওঠার কথা গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের। সেখানেই তৈরি হবে স্মার্ট সিটি-ও। যেখানে থাকবে কর্মীদের জন্য আবাসন, স্কুল-কলেজ ইত্যাদির ব্যবস্থা। দ্বিতীয় কেন্দ্রটির জন্য মুম্বই শহরতলির খালাপুর ও পেন-খোপোলি রোড-এ জায়গা দেখে রেখেছে ফক্সকন। সংস্থা এই দু’টির মধ্যে থেকে পছন্দমতো এলাকা বেছে নিতে পারবে। কারখানায় সরাসরি কাজ পাবেন ৫০ হাজার জন।
হন হাই প্রিশিসন ইন্ডাস্ট্রি-ই ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ফক্সকন নামটি ব্যবহার করে। চুক্তি অনুযায়ী প্রস্তাবিত নতুন কারখানায় তৈরি হবে থিন ফিল্ম ট্রানজিস্টর বা টিএফটি স্ক্রিন (বিশেষ ধরনের এলসিডি স্ক্রিন) এবং সেমিকন্ডাক্টর। তবে এখানে মোবাইল ফোন তৈরি হবে কি না, সে ব্যাপারে মুখ খোলেননি টেরি। তবে টিসিএস, শাপুরজি, পালোনজি, ভারত ফোর্জের মতো সংস্থাকে স্থানীয় সহযোগী হিসেবে।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই ভারতে আগামী এক দশকে ১০টির মতো কারখানা গড়তে ২০০ কোটি ডলার লগ্নির আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন টেরি। মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে। টেরি বলেন, ‘‘দু’মাসে সাত বার ফডণবীসের সঙ্গে দেখা করেছি।’’ তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতার প্রশংসা করেন টেরি। দেশের আর্থিক রাজধানী হিসেবে মুম্বইয়ের গুরুত্বের কথা তিনি লগ্নির আগে মাথায় রেখেছেন। মহারাষ্ট্রের দক্ষ কর্মী সম্পদ এবং এই রাজ্যে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার দু’টি শিল্পের সমন্বয়ের সুযোগের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
ফডণবীস বলেন, সম্প্রতি চিনে গিয়ে ফক্সকনের কারখানা ঘুরে দেখে তাদের মহারাষ্ট্রে লগ্নির আর্জি জানান তিনি। এ দিনের ঘোষণায় তাঁর ইচ্ছাপূরণ হল।