ফাউন্ড্রি ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বিজয় বেরিওয়াল বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে ঢালাই শিল্পের সম্ভাবনা আঁচ করে বিভিন্ন সংস্থা ২০০০ কোটি টাকা লগ্নির পরিকল্পনা করেছিল। ১৫টি নতুন কারখানা তৈরি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত লগ্নি হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।”
রাজ্যে বর্তমানে প্রায় ৪৫০টি ঢালাই কারখানা। এর ৯৮% ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি সংস্থা। প্রতীকী ছবি।
কাঁচামালের দাম হুহু করে বাড়ছে। আর তাতেই খাবি খাচ্ছে দেশের ঢালাই (ফাউন্ড্রি) শিল্প। মাত্র তিন মাসে তাদের প্রধান কাঁচামাল পিগ আয়রন দামি হয়েছে প্রায় ৪০%। বাকিগুলিও চড়া। অতিরিক্ত খরচ পুষিয়ে নিতে বাড়ছে ঢালাই পণ্যের দর। কমছে সংস্থাগুলির বিক্রি, সেই সঙ্গে মুনাফাও। ঢালাই শিল্পের দাবি, অবস্থা এতটাই সঙ্গিন যে, বহু কারখানা বন্ধ হয়েছে কিংবা হওয়ার মুখে। উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে প্রায় প্রতিটি সংস্থা। বেশ কিছু কাজ গিয়েছে। পরিস্থিতি না-শোধরালে আরও হারানোর আশঙ্কা। আর এই সব কিছুর জেরে ধাক্কা খেতে চলেছে রাজ্যের ঢালাই শিল্পে ২০০০ কোটি টাকার লগ্নি-প্রস্তাব।
ফাউন্ড্রি ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বিজয় বেরিওয়াল বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে ঢালাই শিল্পের সম্ভাবনা আঁচ করে বিভিন্ন সংস্থা ২০০০ কোটি টাকা লগ্নির পরিকল্পনা করেছিল। ১৫টি নতুন কারখানা তৈরি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত লগ্নি হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। কিন্তু ওখানেই কার্যত থমকে গিয়েছে উদ্যোগ। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাঁচিল তুলছে প্রস্তাবিত লগ্নি বাস্তবায়িত হওয়ার পথে।’’ তাঁর দাবি, বেশ কয়েক জন উদ্যোগপতি পুঁজি নিয়ে বসে আছেন। কিন্তু সাহস পাচ্ছেন না। উৎপাদনের বর্ধিত খরচ পণ্যের দামকে ঠেলে তুলছে। সেগুলির বিক্রি কমছে। শিল্পের মতে, সংস্থাগুলির মুনাফা ধাক্কা খাচ্ছে বলেই নতুন করে লগ্নির ঝুঁকি নিতে চাইছে না। উল্টে লগ্নিকারীরা পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করছেন।
এই শিল্পে পিগ আয়রন ছাড়াও কাঁচামাল হিসেবে ফেরো অ্যালয়, হার্ড কোক লাগে। ইস্পাত কারখানাগুলিই পিগ আয়রন সরবরাহ করে। দু’বছরে তার দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। সংস্থাগুলির ক্ষোভ, “পিগ আয়রন তৈরির কাঁচামাল লৌহ আকরের জোগান দেশে প্রচুর। তা সত্ত্বেও দাম দু’বছরে ১২০% বৃদ্ধির যুক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। ফেরো অ্যালয় ১৫০% ও হার্ড কোকের দর ১০০% বেড়েছে।’’
রাজ্যে বর্তমানে প্রায় ৪৫০টি ঢালাই কারখানা। এর ৯৮% ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি সংস্থা। বেরিওয়ালের দাবি, ‘‘ইতিমধ্যেই প্রায় ১৫টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। আরও কিছু বন্ধের মুখে। প্রায় তিন লক্ষ মানুষ জড়িত এই শিল্পে।’’
রাজ্যে বিদ্যুতের দাম নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে ফাউন্ড্রি শিল্পে। বেরিওয়ালের অভিযোগ “নানা অঞ্চলে দাম আলাদা। আসানসোল শিল্পাঞ্চলে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের ক্ষেত্রে তা ইউনিটে ৪.৫০ টাকা। অথচ হাওড়ায় ৯ টাকা। এটাও উৎপাদনের খরচ বাড়াচ্ছে।’’ সমস্যা বাড়ছে ব্যাঙ্ক ঋণ দিতে না চাওয়ায়, দাবি সংস্থাগুলির। সমস্যার কথা কেন্দ্রকে জানিয়েছে তারা। কাঁচামালের সমস্যা মেটাতে অবিলম্বে লৌহ আকর ও পিগ আয়রন রফতানি বন্ধের আর্জিও জানানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কতটা কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেই দিকেই তাকিয়ে তারা।