রঘুরাম রাজন। —ফাইল চিত্র।
কর্মসংস্থানের প্রশ্নে প্রায় রোজই মোদী সরকারকে আক্রমণ করছেন বিরোধীরা। এ বার ফের বিষয়টি নিয়ে সরব হলেন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। তাঁর বক্তব্য, ৭% বৃদ্ধি নিয়ে ভারত যে কাজের সুযোগ বাড়াতে পারছে না, তার প্রমাণ মিলছে কিছু কিছু রাজ্যে বিভিন্ন সরকারি চাকরির জন্য বিপুল আবেদন জমা পড়াতেই। আগামী দিনে তাই কাজ তৈরির জন্য শ্রম নির্ভর শিল্প ক্ষেত্রগুলির প্রসারে সরকারের নজর দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি। উল্লেখ্য, এর আগেও বহুবার দেশের বিপুল জনসংখ্যার নিরিখে কাজের সুযোগ কম বলে সতর্ক করেছেন রাজন। বলেছেন, এই মানবসম্পদকে কাজে লাগাতে না পারলে তা আগামী দিনে আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
গত শুক্রবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, কিছু সংস্থার হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত হওয়ার ফলে ছোট শিল্প ধ্বংস হয়েছে এবং মানুষের সামনে কাজের সুযোগ কমেছে। পরের দিনই বিরোধী দলটির সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বক্তব্য ছিল, ‘‘দেশে এখন বেকারত্বের চেয়ে বড় সমস্যা। যুব সম্প্রদায়ের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে মোদী সরকারের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। আমরা শ্রম মন্ত্রকের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে বুঝতে পারব, অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও যুবকদের অসহায়তা আড়াল করা যায়নি।’’
এ বার সেই বেকারত্ব এবং কাজের সুযোগ কমার প্রসঙ্গেই রাজনের দাবি, বর্তমানে দেশে মূলত উচ্চবিত্ত কিছু মানুষ প্রচুর টাকা রোজগার করছেন এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটাচ্ছেন। কিন্তু আর্থিক দিক দিয়ে তলার দিকে থাকা মানুষের কেনাকাটা এখনও অতিমারির আগের পর্যায়ে পৌঁছয়নি। শিকাগো বুথ স্কুলের অর্থনীতির অধ্যাপকের বক্তব্য, ‘‘এটা দুর্ভাগ্যের বিষয়। ...আপনারা মনে করতে পারেন ৭% বৃদ্ধি নিয়ে আমরা প্রচুর কাজ তৈরি করব। কিন্তু উৎপাদন শিল্পের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হবে যে, সেই কাজ তৈরির বেশিরভাগটাই লগ্নির উপরে ভর করে।’’ বেসরকারি ক্ষেত্রেও লগ্নি-ক্ষমতার ৭৫% পর্যন্ত কাজে লাগনো হচ্ছে জানিয়ে তাঁর আরও দাবি, মনে গয় সংস্থাগুলিও মনে করছে যে পুরো ক্ষমতা ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
আর এই প্রসঙ্গেই হাতে গোনা শূন্য সরকারি পদে বিপুল কর্মপ্রার্থীর আবেদনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন প্রাক্তন গভর্নর। তিনি বলেন, মাঝারি মেয়াদে ভারত ৬%-৭% হারে বাড়বে। কিন্তু এখন দেশে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষের কাজ সুযোগ কম। এখন তাই বিপুল সংখ্যায় কাজের সুযোগ তৈরি করা দরকার। সরকারি পরিসংখ্যান ভুলে বিষয়টি খতিয়ে দেখলেই সেই ছবিটা স্পষ্ট হবে। জুলাইয়ের বাজাটে চাকরি তৈরির জন্য যে তিন প্রকল্পের কথা অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাকে স্বাগত জানিয়েও রাজনের মতে, বিষয়টি কাছ থেকে ভাল করে নজরে রাখা দরকার। দেখতে হবে এই উদ্যোগ কতটা ফল দিচ্ছে এবং আরও কী কী করা জরুরি।
পাশাপাশি, ভিয়েতনাম-বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে বস্ত্র ও চর্মশিল্পে উন্নতি করছে, সেই প্রতিযোগিতায় ভারতের পিছিয়ে থাকলে চলবে না বলে বার্তা দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, আর্থিক দিক দিয়ে এগোতে হলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে বিপুল কর্মক্ষম জনসংখ্যার সুযোগ নিতে হবে ভারতকে।