এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র।
তেল ও গ্যাসের আন্তর্জাতিক বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে ভারতের ভূমিকার কথা তুলে ধরলেন ব্রিটেন সফররত বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। দাবি করলেন, এর কৃতিত্ব এ দেশের আমদানি নীতির। যা আখেরে আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধির হারকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তাই সারা বিশ্বের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত ভারতকে
লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত এক আলোচনায় জয়শঙ্কর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতের প্রভাবশালী অবস্থান নিয়ে সরব হন। বলেন, “তেল কেনার ক্ষেত্রে ভারতের আমদানি নীতি বিশ্ব জুড়ে তার দামের আরও চড়ে যাওয়া আটকেছে। কারণ, এই বাজারে ইউরোপের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যেতে হয়নি। ফলে বিশ্বে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণেও ভারতের ভূমিকা রয়েছে। আমাদের তো তাই ধন্যবাদ প্রাপ্য। সে জন্য অপেক্ষা করছি!” জয়শঙ্করের ব্যাখ্যায়, “ভারত যদি রাশিয়ার থেকে অশোধিত তেল না কিনত, তা হলে তার দাম আকাশ ছুঁয়ে ফেলত। কারণ ওই পরিমাণ তেল কিনতে সেই সব বাজারেই যেতে হত, যেখান থেকে ইউরোপও কিনছে। ফলে ইউরোপকে আমাদের থেকেও বেশি অর্থ দিতে হত।” রাশিয়া-ইউক্রেনের সংঘাত প্রসঙ্গে ভারতের অবস্থান নিয়ে তাঁর দাবি, নীতি এবং জাতীয় স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্যের প্রয়োজন। নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের অংশীদারিত্ব বজায় রাখাটা জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে রাশিয়া থেকে সস্তায় ভারতের তেল কেনা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক হয়েছে বটে। তবে তাতেই আমদানি-রফতানির জন্য বিদেশি মুদ্রার আয়-ব্যয়ের ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ রেখেছে এ দেশ। কম বিদেশি মুদ্রা খরচ হয়েছে। আয় বেড়েছে শোধিত তেল রফতানি করে।
যদিও রুশ তেল নিয়ে বারবার অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে মোদী সরকার। ওই তেল থেকে ভারতে তৈরি পেট্রোপণ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ডাক দেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিদেশনীতি বিষয়ক কমিটির প্রধান জোসেফ বোরেল। বলেন, প্রকারান্তরে নিষেধাজ্ঞাকে অগ্রাহ্য করে রুশ তেল থেকে তৈরি ডিজ়েল-সহ নানা জ্বালানি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বেচছে ভারত। তাই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি। পাল্টা জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, ইউরোপীয় কাউন্সিলের বিধানে স্পষ্ট বলা আছে, রুশ অশোধিত তেল তৃতীয় কোনও দেশে উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিবর্তিত হলে তাকে আর রুশ তেল বলা হবে না। এই প্রেক্ষিতে ব্রিটেন থেকে বিশ্ব বাজারের আর্থিক সঙ্কট কমানোয় ভারতের ভূমিকা তুলে ধরার এই চেষ্টা তাৎপর্যপূর্ণ, মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।