ভারতের শেয়ার ও ঋণপত্রের বাজার থেকে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির টানা পুঁজি ফেরানো যে সরকারকে চিন্তায় ফেলেছে, কিছু দিন আগে সে কথা স্বীকার করেছে কেন্দ্র। এই অবস্থায় আশঙ্কা বাড়িয়ে পরিসংখ্যান জানাল, শুধু অক্টোবরেই ওই সব সংস্থা তুলে নিয়েছে ৩৮,৯০০ কোটি টাকার লগ্নি। প্রায় দু’বছরে সব থেকে বেশি। আর চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত তা পেরিয়েছে লক্ষ কোটি।
এতেই কাঁপুনি ধরেছে সংশ্লিষ্ট মহলে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে বছরের শেষে অঙ্কটা কোথায় দাঁড়াবে? কারণ, সামনেই ভোট। ফলে অর্থনীতির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়ুক বা কমুক, রাজনৈতিক অভিঘাতে বাজার অস্থির থাকার আশঙ্কা থাকছেই। তার উপরে ওই সব সংস্থা তাদের লগ্নি ভাঙানোর পরে ডলারে রূপান্তরিত করে সরায়। ফলে দেশে ডলারের চাহিদা ও দাম বাড়ে। যা এখন কাঙ্ক্ষিত নয় মোটেই।
তথ্য বলছে, এ দেশের মূলধনী বাজারের উপর ওই সব সংস্থার অনাস্থার অন্যতম কারণ আমেরিকায় সুদ বৃদ্ধি, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়া, ডলারের নিরিখে টাকার পতন, চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে না থাকার আশঙ্কা ও কেন্দ্রের রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্য পূরণ করতে পারা নিয়ে অনিশ্চয়তা। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এর সবক’টিই আঘাত হানে অর্থনীতির স্বাস্থ্যে। তাই ওই লগ্নিকারীরা এতটা সাবধানী। জানুয়ারি, মার্চ, জুলাই ও অগস্ট (এই চার মাসে ঢেলেছে মোট ৩২,০০০ কোটি) বাদে বছরভর পুঁজি তুলেই গিয়েছে তারা।
তবে হালে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় তেলকে কিছুটা সস্তা হতে দেখার পাশাপাশি খানিকটা মাথা নামিয়েছে ডলারও। আর তেল, ডলার তেমন না বাড়লে আমদানি খাতে খরচ কম হয় বলে চলতি খাতে ঘাটতিও নিয়ন্ত্রণে থাকার সম্ভাবনা বাড়ে। উপরন্তু আমদানিতে রাশ টানতেও নানা পদক্ষেপ করছে সরকার।
সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেও আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গের আশ্বাস ছিল, ওই সব বিদেশি লগ্নির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার পথ খুঁজছেন তাঁরা। লগ্নিকারীরা দিন গুনছেন তারই অপেক্ষায়।