ভারত ছোট-মাঝারি গাড়ির বাজার। সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরণ। প্রচলিত এই ধারণায় ঘা দিয়েছে আধুনিক জীবনযাত্রা। সাদামাটা নয়, বরং একটু বড় কিংবা ‘স্পোর্টি লুক’-এর গাড়ি শুধু তরুণ প্রজন্মই নয়, টানছে অনেককেই। এই বদলে যাওয়া চাহিদার কথা মাথায় রেখেই ভারত, চিন, ব্রাজিলের মতো সম্ভাবনাময় বাজারে এ বার নতুন ধরনের ‘স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্ল’ (এসইউভি) ও ‘ক্রসওভার’ (ছোট ‘হ্যাচব্যাক’ ও এসইউভি-র মেলবন্ধন) তৈরিতে নজর দেবে মার্কিন বহুজাতিক ফোর্ড মোটর। ফোর্ডের মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘ক্রেতার চাহিদা মেপেই এগোই আমরা।’’
এই পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দিতেই নতুন ‘কমপ্যাক্ট’ গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা হিমঘরে পাঠাচ্ছে ফোর্ড মোটর। ইতিমধ্যেই ভারতে কমপ্যাক্ট গাড়ি তৈরির ৫০০ কোটি ডলারের পরিকল্পনা থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছে আর এক মার্কিন বহুজাতিক জেনারেল মোটরস (জিএম)।
২০১৮ থেকে মূলত ভারত, চিন ও অন্যান্য সম্ভাবনাময় দেশে ‘বি৫০০’ রেঞ্জ-এর নতুন গাড়ি (যার মধ্যে ছোট ও মাঝারি মাপের হ্যাচব্যাক, সেডান ও এসইউভি ছিল) তৈরির কথা ছিল ফোর্ডের। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, হ্যাচব্যাক ও সেডানের বিক্রিতে ধাক্কা আসায় সেই পরিকল্পনা বাতিল করেছে তারা। যন্ত্রাংশ সরবরাহ সংস্থাগুলিকে তারা গত জুলাইয়ে সে কথা জানিয়েও দিয়েছে। ব্রাজিল, রাশিয়া ও তাইল্যান্ডেও ওই ধরনের নতুন কমপ্যাক্ট গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা ছিল তাদের।
ফোর্ডের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত আমেরিকার দু’টি সূত্রের খবর, নতুন পরিস্থিতিতে ২০২০-’২১ সালের মধ্যে ইকো-স্পোর্ট, ফিগো এবং ফোর্ড-অ্যাস্পায়ার-এর মতো ভারতে চালু গাড়িগুলির মানোন্নয়নে জোর দেবে সংস্থা, যা তাদের মুনাফা বাড়াতে সাহায্য করবে।
কমপ্যাক্ট গাড়ির বাজার এখন আর তেমন না-থাকায় সে রকম নতুন গাড়ি তৈরির চেয়ে ফোর্ড ও জিএমের পক্ষে ভারতের মতো বাজারে পুরনো মডেল ঢেলে সাজাই যুক্তিসঙ্গত বলেই মনে করেন আমেরিকার একটি উপদেষ্টা সংস্থা ‘গ্লোবাল ভেহিকলস ফোরকাস্টিং’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট স্যাম ফিওরানি-ও। চিনেও ছবিটা প্রায় একই। সেখানেও ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। এবং বড় বড় শহরে একটিই গাড়ি রাখতে পারেন তাঁরা। ফলে তুলনায় বড় এসইউভি ও ক্রসওভারের চাহিদা বাড়ছে।
ফোর্ডের মুখপাত্র প্রসঙ্গত জানিয়েছেন, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের বাজারকেই পাখির চোখ করে এগোতে চান তাঁরা। তাই চাহিদার ধরন বদলানোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন গাড়ি উদ্ভাবনে সংস্থা বদ্ধপরিকর।