প্রতীকী ছবি।
ঠিক সময়ে ঋণের কিস্তির টাকা মেটালে বা বকেয়া ঋণ শুধলে কর্পোরেট সংস্থাগুলি পরেও ঋণ পাবে। না হলে পরে ঋণ পাওয়া তো দূরের কথা, চলতি ঋণও বাতিল হয়ে যাবে। দেশের বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থার কাছ থেকে ঋণের টাকা আদায় করতে নাজেহাল হয়ে এই পথ ধরল ১৬টি ব্যাঙ্ক। তার ফলে, প্রায় সওয়া ১ লক্ষ কোটি টাকার কর্পোরেট ঋণ বাতিল হয়ে গেল, চলতি আর্থিক বছরে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে দেওয়া ঋণের টাকা পুরোপুরি ফেরত পাওয়ার জন্য এত দিন দু’টি পথে হাঁটত ব্যাঙ্কগুলি। হয় সেই টাকা উদ্ধার করা হত ঋণ পরিশোধ (ডেট রিকভারি) ট্রাইব্যুনালে গিয়ে, না হলে ব্যাঙ্কগুলিকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হত ২০১৬-র ‘ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাঙ্করাপ্টসি কোড’ (আইবিসি) অনুযায়ী। দু’টি পদ্ধতির মধ্যে আইবিসি-ই দ্রুততর। কিন্তু ঋণগ্রস্ত কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে তাদের সম্পত্তি বেচে ঋণ মেটাতে বাধ্য করানোর মতো তেমন জোরালো কোনও আইন নেই আইবিসি-তে। তা প্রণয়ন করার ব্যাপারেও চলছে টালবাহানা। এতে অন্য কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে ঋণ দিতে বা তাদের ঋণের পরিমাণ বাড়াতে অসুবিধা হচ্ছে ব্যাঙ্কগুলির।
পথ দেখিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক
তারই জেরে গত সপ্তাহে একটি নজরকাড়া পদক্ষেপ করে স্টেট ব্যাঙ্ক। ‘এসার স্টিল’কে দেওয়া ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বাতিল করে তা বেচে দেওয়া হয় ১৮ শতাংশ ডিসকাউন্টে। আর স্টেট ব্যাঙ্ক সেটা করেছে ওই ঋণ দেওয়ার ৫০০ দিন বা দেড় বছরের মাথায়।
আরও পড়ুন- হতাশ করেছে শিল্প, সঞ্জীবনী সুদ-সম্ভাবনাই
আরও পড়ুন- চক্রের ‘কিংপিন’ জেলে, তার পরেও একাধিক চেক জালিয়াতি, মিলছে পাক যোগ
ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, যে ১৬টি ব্যাঙ্ক চলতি অর্থবর্ষে ১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকার কর্পোরেট ঋণ বাতিল করেছে, তারাও সম্ভবত হাঁটতে চলেছে স্টেট ব্যাঙ্কের দেখানো পথেই। সেই ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে অন্যতম কানাড়া ব্যাঙ্ক, আইডিবিআই ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, স্টেট ব্যাঙ্ক, দেনা ব্যাঙ্ক ও আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক।
ঋণ বাতিল করে তা ডিসকাউন্টে বাজারে বেচে দিলে ব্যাঙ্কের কী লাভ হচ্ছে?
স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার বলেছেন, ‘‘টাকার মূল্য রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে কোনও সুদ ছাড়া তা বাজারে ফেলে রাখা যাবে না। আমরা যদি বকেয়া ঋণের টাকা আদায় করতে না পেরে সেই ঋণ ডিসকাউন্ট দিয়ে বাজারে বেচে দিতে পারি, তা হলেও আমরা বাড়তি সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিতে পারি অন্য কর্পোরেট সংস্থাকে।’’ স্টেট ব্যাঙ্ক গত সপ্তাহে বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থাকে দেওয়া ঋণ তাদের ৬২টি অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নিয়ে ২৭ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকার ঋণ নিলাম ডেকে বাজারে বেচেছে।