নির্মলার নিশানায় রাজন, মনমোহন

এ দিন অবশ্য তুলোধোনা হয়েছে কেন্দ্রেরও। আইএমএফ ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৬.১% করায় কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা বলেছেন, ‘‘ভাল বৃদ্ধি দেখাতে বিজেপি জিডিপির সংখ্যা বদলেছে, তথ্য লুকিয়েছে, মিথ্যে কথা বলেছে। কিন্তু কিছুই কাজে লাগেনি।’’

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:২৫
Share:

বক্তৃতা: কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে। ছবি: পিটিআই।

বৃদ্ধি ধাক্কা খাওয়ার জন্য সম্প্রতি কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। পাল্টা হিসেবে গত মঙ্গলবার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সে বক্তৃতার মঞ্চ থেকে রাজনের বিরুদ্ধে নাগাড়ে আক্রমণ শানালেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ছাড় দিলেন না প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকেও। কখনও বললেন, মনমোহন ও রাজনের জুটি একসঙ্গে ক্ষমতায় থাকাকালীনই দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি সব থেকে খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, যা আর কখনও দেখা যায়নি। কখনও ওই জুটির আমলে মঞ্জুর ঋণ নিয়ে ঠারেঠোরে তুললেন দুর্নীতির অভিযোগ। কখনও তাঁদের দিকে ইঙ্গিত করেই প্রশ্ন তুললেন ব্যাঙ্কের আর্থিক অবস্থায় নজরদারি না চালানো ও অনুৎপাদক সম্পদের উৎস নিয়ে।

Advertisement

এ দিন অবশ্য তুলোধোনা হয়েছে কেন্দ্রেরও। আইএমএফ ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৬.১% করায় কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা বলেছেন, ‘‘ভাল বৃদ্ধি দেখাতে বিজেপি জিডিপির সংখ্যা বদলেছে, তথ্য লুকিয়েছে, মিথ্যে কথা বলেছে। কিন্তু কিছুই কাজে লাগেনি।’’

মঙ্গলবারের বক্তৃতায় রাজনকে নিশানা করতে নির্মলা মূলত টেনে এনেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির দুরবস্থার কথা। অনুৎপাদক সম্পদের বোঝায় যারা বহু দিন ধরে জেরবার। এই সমস্যা যুঝতে ব্যাঙ্কের সম্পদের মান খতিয়ে দেখার পদক্ষেপের জন্য রাজনকে ধন্যবাদ জানিয়েই নির্মলার খোঁচা ‘‘সেগুলি এসেছিল কোথা থেকে?’’ এই অবস্থা কেন এবং কী করে হল, অর্থনীতিবিদদের কাছে তাঁর জবাবদিহিও দাবি করেছেন তিনি।

Advertisement

আক্রমণ

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সব থেকে খারাপ অবস্থা দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সিংহ এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর হিসেবে রাজনের একসঙ্গে থাকার সময়। সে সময় এ ব্যাপারে আমরা কেউ কিছু জানতাম না।

...আমি জানতে চাই রাজন যখন গভর্নর হিসেবে ভারতীয় ব্যাঙ্ক নিয়ে কথা বলতেন সেই সময়ের কথা, যার জন্য এখন ব্যাঙ্কগুলিকে বাঁচানোই প্রাথমিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থমন্ত্রীর। এবং প্রাণ বাঁচানোর মতো জরুরি অবস্থা রাতারাতি তৈরি হতে পারে না।

রাজন গভর্নর থাকার সময় শুধু অন্তরঙ্গ নেতাদের ফোনের ভিত্তিতেই ধার দেওয়া হত এবং সেই পাঁক থেকে বেরোতে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি এখনও কেন্দ্রের জোগানো শেয়ার মূলধনের উপর নির্ভর করছে।

খুব বেশি গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব দুর্নীতি বয়ে আনে।...আমরা যা এখনও পরিষ্কার করে চলেছি।

রাজন বলেছিলেন


• মোদী সরকারের প্রথম দফায় অর্থনীতি ভাল করেনি সরকার চূড়ান্ত কেন্দ্রীভূত থাকায়।
• বৃদ্ধিতে গতি আনতে নেতৃত্বের মধ্যে ধারাবাহিক ও স্পষ্ট পরিকল্পনা ছিল না।
• পরিস্থিতি কতটা সঙ্গিন, হয়তো তা বুঝতেই পারছে না কেন্দ্র। নয়তো বুঝেও তা এড়িয়ে যাচ্ছে।
• চাহিদার অভাবে বৃদ্ধি তো ধাক্কা খেয়েছেই, তাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর বিশেষ রসদও হাতে নেই কেন্দ্রের।
• রাজকোষ ঘাটতিকে লক্ষ্যে বাঁধার কথা বলা হলেও, অনেক কিছু ধামাচাপা তার হিসেবের আড়ালে।

অর্থনীতির উন্নতি না হওয়ার কারণ হিসেবে সরকারে ক্ষমতার কেন্দ্রীভূত হয়ে থাকার কথা বলেছিলেন রাজন। এই প্রেক্ষিতে বেশি গণতান্ত্রিক নেতৃত্বকে দুর্নীতির মূল উৎস তকমা দেন নির্মলা। তাঁর তির, ‘‘আমার ভয়, এ রকম নোংরা ও পুতিগন্ধময় দুর্নীতির সময়কে পেছনে ফেলে এসেছি, যা আজও সাফ করে চলেছি।’’

নির্মলা সেখানেই বলেন, ভারতের ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি হয়ে ওঠা কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। ইঙ্গিত দেন এই অর্থবর্ষেই আরও সংস্কারের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement