অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ফাইল ছবি।
বাজেটে নতুন আয়কর বিকল্পে করছাড়ের সীমা বাড়িয়ে মধ্যবিত্তের হাতে আরও বেশি টাকা তুলে দেওয়ার দাবি করছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। মোদী সরকার বলছে, তাঁরা যাতে সেই অর্থ নিজের পছন্দমতো খরচ অথবা সঞ্চয় করতে পারেন, সেই সুযোগ খুলে দেওয়া হয়েছে। ধারণা, এর মাধ্যমে চাহিদা বাড়বে, চাঙ্গা হবে অর্থনীতি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, মাথা নামালেও এখনও অত্যাবশ্যক পণ্যের দাম যেখানে রয়েছে, তাতে সংসার খরচ চালিয়ে কত জন অতিরিক্ত ব্যয় করতে পারবেন। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের অবশ্য আশ্বাস, আর দেড় মাসের মধ্যে শুরু হতে চলা ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে দেশে মূল্যবৃদ্ধির হার নামবে ৫.৩ শতাংশে। এমনকি অশোধিত তেলের দর যত নামবে, মানুষকে স্বস্তি দিয়ে জিনিসের দামও তত কমবে। তবে বিভিন্ন দেশে অর্থনীতির চাকায় গতি ফিরলে উল্টোটা হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি তিনি।
করোনার পরে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্ব বাজারে মাত্রা ছাড়িয়েছিল অশোধিত তেলের দর তথা মূল্যবৃদ্ধির হার। যাতে রাশ টানতে টানা সুদ বাড়াচ্ছে শীর্ষ ব্যাঙ্কগুলি। ভারতেও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ ২৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে ৬.৫ শতাংশে। তবে যত সুদ বেড়েছে, ততই বিশ্ব অর্থনীতি তথা উন্নত দেশগুলির মন্দায় ডোবার আশঙ্কাও বেড়েছে। গত কয়েক মাসে তেলের দাম ও মূল্যবৃদ্ধি মাথা নামালেও, দুশ্চিন্তা কাটছে না। বরং মানুষের হাতে খরচের টাকা না-থাকায় উল্টে চাহিদা ধাক্কা খেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই অবস্থায় শনিবার নির্মলার সঙ্গে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বাজেট পরবর্তী বৈঠকে শক্তিকান্তের আশ্বাস, ছ’মাস আগেও বিশ্ব অর্থনীতি ঘিরে যতটা আতঙ্কের কারণ ছিল, এখন তা অনেকটাই কেটেছে। খুব বেশি হলে এখন কিছু দেশে সামান্য মন্দা অথবা শ্লথ বৃদ্ধির ছবি দেখা যেতে পারে। আপাতত পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে হবে। আর নির্মলার বক্তব্য, যাঁরা আয় করেন এবং সংসার চালান, তাঁরা জানেন টাকা কোথায় গেলে ভাল। ফলে তাঁদেরকে কোনও এক পথে চালানোর কথা কেন্দ্র বলছে না। তেমনই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধাও দিচ্ছে না। বরং মানুষের হাতে টাকা দিয়ে সামনে আরও বেশি সুযোগ খুলে দেওয়া হচ্ছে।
সেই সঙ্গে গভর্নরের আরও বক্তব্য, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম ব্যারেলে ৯৫ ডলার থাকবে ধরে পরের বছরের মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস করেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। সেই দাম আরও কমলে মূল্যবৃদ্ধি আরও মাথা নামাবে বলে মনে করেন তিনি। তবে আরবিআই রেপো রেট (যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিতে ঋণ দেয় আরবিআই) বাড়ানোর ফলে ব্যাঙ্কে সুদ বাড়ায় চাপে পড়ছেন ঋণগ্রহীতারা। যে কারণে এ দিন শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে সুদের হার আর না-বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ বিক্রমজিৎ সিংহ সাহনি। তাঁর মতে, সেটা হলে ফ্ল্যাট-বাড়ির ক্রেতা ও ছোট শিল্প ধাক্কা খাবে।
সুদ প্রসঙ্গে শক্তিকান্তের অবশ্য দাবি, সুদের হারের বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত নয়। ফলে বাজারের প্রতিযোগিতাই ঠিক করে দেবে ঋণ ও আমানতে সুদ কত থাকবে। তবে ভারতে তিন বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় সুদের হার (প্রকৃত সুদ) শূন্যের নীচে ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে তা কম থাকলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। সবেমাত্র দেশে প্রকৃত সুদ ফের বাড়তে শুরু করেছে।