রাজস্ব ঘাটতির লক্ষ্যই চায় না কেন্দ্র, বাড়তি ধারে ব্যবস্থা বেতন, খয়রাতির

শত চেষ্টাতেও রাজস্ব ঘাটতিতে লাগাম টানতে পারছে না মোদী সরকার। এ বার নিজেদের জন্য সেই ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা বাঁধার রেওয়াজই তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:২১
Share:

অরুণ জেটলি।

এ যেন অনেক ছাত্রছাত্রী ফেল করছে বলে পাশ-ফেলই তুলে দেওয়ার নিদান!

Advertisement

শত চেষ্টাতেও রাজস্ব ঘাটতিতে লাগাম টানতে পারছে না মোদী সরকার। এ বার নিজেদের জন্য সেই ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা বাঁধার রেওয়াজই তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। তার হিসেব রাখা হবে না বাজেটেও। সরকারি ধার কমানোর জন্য শুধু রাজকোষ ঘাটতি হ্রাসকেই পাখির চোখ করতে চায় কেন্দ্র। যা দেখে অনেকের আশঙ্কা, আসলে বেতন, পেনশন এবং পুরনো ধারে সুদ মেটানোর জন্য আরও ঋণ করার রাস্তা খুলতেই এই বন্দোবস্ত।

এ বার বাজেটেই রাজস্ব ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব এনেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তার জন্য অর্থ বিলের মাধ্যমে আর্থিক শৃঙ্খলা (এফআরবিএম) আইন সংশোধন করতে চান তাঁরা। যাতে আগামী দিনে বাজেটে রাজস্ব ঘাটতি জানানোর বাধ্যবাধকতা না থাকে। বাজেট নথিতেও বলা হয়েছে, রাজস্ব ঘাটতি কমানো আর অগ্রাধিকার পাবে না। তা এমনিতেই কমছে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, মুখ্য উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনও মনে করেন, কোনও একটি ঘাটতির সংখ্যার পিছনে না ছুটে ঋণের বোঝা কমানো জরুরি।

Advertisement

এখানেই ধারের টাকায় খয়রাতির আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির (এনআইপিএফপি) পিনাকী চক্রবর্তীর মতে, ‘‘কেন্দ্র রাজস্ব ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে পৌঁছতে পারছে না। রাজকোষ ঘাটতি কমাতেও হিমসিম। তাই পরিকাঠামোয় খরচ ছেঁটে রাজকোষ ঘাটতি কমানোর লক্ষ্য নিচ্ছে।’’

এনআইপিএফপির আর এক শিক্ষক এন আর ভানুমূর্তির মতে, এতে পরিকাঠামো বা স্থায়ী সম্পদ তৈরিতে খরচ কমবে। মার খাবে বৃদ্ধি।

দু’য়ের তফাত

• সরকারের মোট ব্যয় যদি আয়ের থেকে বেশি হয়, তবে সেই ফারাকই রাজকোষ ঘাটতি। লক্ষ্য থাকে তাকে জিডিপির নির্দিষ্ট অনুপাতের মধ্যে বেঁধে রাখার। এই অর্থবর্ষে তা ৩.৫%

• রাজস্ব ঘাটতি হিসেব করতে গেলেও সরকারের রাজস্ব আদায় থেকে রাজস্ব ব্যয় বাদ দিতে হয়। এই ঘাটতি বেশি হওয়া মানে বেতন-পেনশন দেওয়ার খরচ কিংবা ধারের সুদ মেটাতেই হিমসিম খাচ্ছে সরকার। চলতি অর্থবর্ষে লক্ষ্য এই ঘাটতিকে জিডিপির ২.৬ শতাংশে বেঁধে রাখা

কেন্দ্রের ভাবনা

• রাজস্ব ঘাটতির হিসেব আর বাজেটে নয়। তার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করারও দরকার নেই

• যুক্তি, সব মিলিয়ে ধার কমানোই লক্ষ্য। তাই পাখির চোখ হোক শুধু রাজকোষ ঘাটতি

খটকা যেখানে

• অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে অনেক সময়ে রাজকোষ ঘাটতি সামান্য বাড়িয়েও টাকা ঢালা হয় রাস্তা, বন্দর, সেতুর মতো পরিকাঠামো গড়তে। কিন্তু তা বলে রাজস্ব ঘাটতি বাড়া কাজের কথা নয়

• অর্থনীতিবিদদের যুক্তি, পরিকাঠামো দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতিকে মজবুত করে। কিন্তু বেতন, পেনশনের জন্য বেশি ঋণ করা অর্থহীন

• প্রশ্ন, সেই বন্দোবস্ত করতেই কি রাজস্ব ঘাটতির লক্ষ্য নির্ধারণ থেকে সরতে চাইছে কেন্দ্র?

অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, স্কুলবাড়ি তৈরিতে টাকা লাগলে, শিক্ষকদের বেতনের জন্যও বরাদ্দ জরুরি। ডাক্তার, নার্সদের বেতনের বন্দোবস্ত না করে শুধু হাসপাতাল গড়লে চলবে? এখানে পরিকাঠামোয় ঢালা টাকা মূলধনী ব্যয়। অন্যগুলি রাজস্ব ব্যয়। আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গের যুক্তি, ‘‘এই মূলধনী ও রাজস্ব খরচের মধ্যে ফারাক আসলে মেকি।’’

ভানুমূর্তির পাল্টা যুক্তি, শিক্ষক, চিকিৎসকদের বেতন দেওয়া জরুরি। কিন্তু স্কুল, হাসপাতাল তৈরির খরচ ছেঁটে তার ব্যয় বাড়ানো কাজের কথা নয়। তা ছাড়া, বিশেষজ্ঞরা মনে করাচ্ছেন, রাজস্ব খরচের প্রায় ২০% যায় পুরনো ঋণে সুদ মেটাতেই।

এই অর্থবর্ষে জেটলি রাজস্ব ঘাটতি ২.৬ শতাংশে বাঁধার কথা বলেছেন। আগামী বছরে তা ২.২% হওয়ার কথা। কিন্তু আইন বদল হলে, সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না করলেও চলবে। ভানুমূর্তির অভিযোগ, বিদেশি রেটিং সংস্থাগুলি রাজকোষ ঘাটতির দিকে নজর রাখছে বলে সরকার তা কমাতে চায়। কিন্তু তা বলে পরিকাঠামোয় খরচ ছাঁটাই কোনও ভাবেই কাম্য নয়।

সম্প্রতি নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ রাজীব কুমার বলেছিলেন, ‘‘রাজকোষ ঘাটতি ছাঁটার থেকেও রাজস্ব ঘাটতি শূন্যে নামানো অনেক বেশি জরুরি।’’ এখন কিন্তু সরকারের গলায় অন্য সুর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement