ফাইল চিত্র।
তাঁকে ঘিরে উন্মাদনা বিশ্ব জুড়ে। দু’বছর ধরে তিনি ভারতে পা রাখার আশ্বাসও দিচ্ছেন। সংস্থার নথিভুক্ত অফিসও নাকি খোলা হয়েছে বেঙ্গালুরুতে। কিন্তু ঠিক কবে আমেরিকার সেই বৈদ্যুতিক গাড়ি সংস্থা টেসলাকে নিয়ে প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও ইলন মাস্ক এ দেশে আসবেন, তা ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। অবশেষে তিনি নিজেই খোলসা করলেন সেই দেরির কারণ। তাঁর বার্তা, সেই পথে বাধা আসলে ভারতের ‘চড়া’ শুল্ক। বৈদ্যুতিক গাড়ির সহায়ক পরিবেশ গড়া নিয়ে ভারতের মনোভাবেও প্রশ্ন তুলেছেন টেসলা কর্ণধার। শর্ত বেঁধেছেন, আমদানি করা গাড়ি বিক্রি সফল হলে, তবেই এখানে কারখানা গড়ার কথা ভাবা হবে। মোদী সরকার যখন বৈদ্যুতিক গাড়িতে জোর দেওয়ার কথা বলছে, তখন মাস্কের এই বার্তা নিঃসন্দেহে তাদের সেই প্রচার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে বলেই মত সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের।
বহু দিন ধরেই বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে মাস্ক-কে ভারতে পা রাখার আর্জি জানাচ্ছিলেন নেটিজেনরা। সম্প্রতি সেই পথে হেঁটেই তাঁকে সরাসরি বার্তা পাঠান ইউটিউবার মদন গৌরি। তাঁর টুইট, ‘‘ভারতে টেসলার গাড়ি আনুন।’’ তারই জবাবি টুইটে মাস্ক বলেন, ‘‘আমরা তা চাই। কিন্তু (ভারতে) আমদানি শুল্ক বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। তা ছাড়া ‘শুদ্ধ’ জ্বালানির (বৈদ্যুতিক) গাড়িকে এ দেশে ডিজেল-পেট্রলের গাড়ির সঙ্গে একই ভাবে দেখা হয়। যা আবহাওয়া (দূষণ) সংক্রান্ত ভারতের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে খাপ খায় না।’’ একই সঙ্গে অবশ্য টেসলা কর্তার আশা, বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে অন্তত সাময়িক ভাবে শুল্ক কমাবে কেন্দ্র। সেই সঙ্গে এ দেশে যন্ত্রাংশ জুড়ে গাড়ি তৈরি করা সম্ভব কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে তাঁর দাবি, ভারতে আমদানি করা গাড়ি বিক্রিতে সফল হলে ভবিষ্যতে কারখানা গড়ার পথ খোলা।
মাস্কের এই টুইটের পরে অনেকে মনে করাচ্ছেন, কয়েক বছর আগে ভারতে হার্লে ডেভিডসনের বাইক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যে করের ‘চড়া’ হার নিয়ে আগে খোদ আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তোপ দেগেছিলেন। ভারতকে ‘শুল্কের রাজা’ বলেছিলেন তিনি। গাড়ির কর নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দেগে টয়োটা কির্লোস্কর মোটরের ভাইস চেয়ারম্যান শেখর বিশ্বনাথনের দাবি ছিল, এতে চাহিদা ধাক্কা খায়। উৎপাদন ক্ষমতা বা কর্মসংস্থান, কোনওটিই বাড়ে না খুব কিছু। উল্টে শাস্তিমূলক কর বিদেশি লগ্নিকে নিরুৎসাহিত করে। গাড়ি শিল্পের সংগঠন সিয়ামও কেন্দ্রের কাছে কর হ্রাসের আর্জি জানিয়েছে। সূত্রের খবর, শুধু চড়া শুল্ক নিয়ে মাস্কের সরব হওয়াই নয়, শুল্ক কমাতে মোদী সরকারকে আর্জি জানিয়েছে টেসলাও।
বস্তুত, সম্পূর্ণ তৈরি গাড়ি আমদানি করলে ইঞ্জিনের ক্ষমতা-সহ বিভিন্ন মাপকাঠির ভিত্তিতে ৬০%-১০০% পর্যন্ত আমদানি শুল্ক চাপে। পাশাপাশি, ভারতেও বড় গাড়ির ক্ষেত্রে জিএসটি ও সেস নিয়ে করের হার দাঁড়ায় ৫০% পর্যন্ত। মোদী সরকার আমদানি খরচ কমাতে এ দেশেই লগ্নি টানতে উৎসাহী। গাড়ি শিল্পের একাংশের মতে, উঁচু করের ধাপ সেই লগ্নি বা বিদেশি প্রযুক্তি প্রবেশের পথে অন্তরায়। দামি ও আধুনিক প্রযুক্তির গাড়ির যন্ত্রাংশ এখানে তৈরি করতে হলে যা জরুরি। বিশেষত বৈদ্যুতিক প্রযুক্তির বিকাশ না-ঘটলে কেন্দ্র যতই সেই গাড়ির ব্যবহার বাড়াতে প্রচার চালাক না-কেন, তা ধাক্কা খাবে। এই পরিস্থিতিতে আপাতত কেন্দ্র কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং কবে টেসলার গাড়ি আসে, সে দিকেই তাকিয়ে সকলে।