উত্তর প্রদেশে বিজেপি জিতলে সূচক চাঙ্গা হবে, বেশ কিছু দিন ধরে এই বার্তাই ঘুরে বেড়িয়েছে মূলধনী বাজার মহলে। এ বার বিজেপি জেতার প্রভাব কতটা পড়ে, তা দেখার জন্য আগামী মঙ্গলবার বাজার খোলার দিকেই তাকিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল। সোমবার হোলি উপলক্ষে লেনদেন বন্ধ থাকায় টানা তিন দিন পরে মঙ্গলবারই ফের বাজারমুখো হবেন বিনিয়োগকারীরা।
তবে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অবশ্য অনেকেরই মত, ভোটের ফলের প্রথমিক ধাক্কায় বাজার উঠলেও দীর্ঘ মেয়াদে দেশের আর্থিক ভিত্তির উপর ভর করেই সূচকের উত্থান-পতনের গতি নির্ধারিত হবে। পাশাপাশি, তাঁরা বুথ ফেরত সমীক্ষা থেকে ভোটের হাওয়া কিছুটা আগাম বুঝতে পেরেছিলেন বলেও মনে করছেন বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ। ফলে বাজারে ভোটের রায়ের খুব বেশি প্রভাব না-ও পড়তে পারে বলে তাঁদের ধারণা।
শুধু উত্তরপ্রদেশেই নয়, দেশের যে-পাঁচটি রাজ্যে সম্প্রতি বিধানসভা নির্বাচন হল, তার মধ্যে দু’টিই দখল করে ফেলল বিজেপি। উত্তরপ্রদেশে তো তাদের বিপুল জয় অবাক করেছে অনেক বিজেপি সমর্থককেও। তবে নির্বাচনের প্রভাব ভারতের শেয়ার বাজারে কতটা পড়বে, তা কিন্তু সোমবারই নির্ধারিত হয়ে যাবে সিঙ্গাপুরে। কারণ, সিঙ্গাপুর স্টক এক্সচেঞ্জে নিফ্টির আওতায় থাকা শেয়ারগুলি নথিভুক্ত রয়েছে। এসজিএক্স-নিফ্টি নামে ওই সব শেয়ার লেনদেন হয়। সোমবারও সেগুলি যথারীতি কেনাবেচা হবে। আর বিজেপি জেতার প্রথমিক প্রতিক্রিয়া প্রথমে পড়বে সেখানেই।
প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, ‘‘নির্বাচনে বিজেপি জেতার তাৎক্ষণিক তাপ প্রথম পড়বে সিঙ্গাপুরের শেয়ার বাজারে। সেখানে সূচক যে-দিকে ঘুরবে তারই প্রতিফলন হবে মঙ্গলবার ভারতের বাজারে।’’ তবে বিশেষজ্ঞ এবং ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক বলেন, ‘‘আমার ধারণা, নিফ্টি এক বছরের মধ্যেই ১০ হাজার অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলবে।’’
মোটমুটি ভাবে বাজার বিশেষজ্ঞদের মধ্যে প্রায় সকলেই ধরে নিয়েছেন, আপাতত শেয়ার বাজার বাড়বে। কিন্তু পাশাপাশি তাঁরা এ ব্যাপারেও নিশ্চিত যে, দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে কিন্তু সূচকের গতি নির্ধারিত করবে দেশের আর্থিক অবস্থা। তবে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেরই ধারণা, বিজেপির এই জয়ের ফলে আর্থিক সংস্কার গতি পাবে। কারণ, এর জেরে রাজ্যসভায় বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি পাবে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে রাজ্যসভায় বিরোধীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আর্থিক সংস্কারে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল।
এ দিকে আগামী মঙ্গলবারই আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের কর্তারা দু’দিনের বৈঠকে বসছেন। সুদের হার বাড়ানো হবে কি না, সে ব্যাপারে ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। অবশ্য তাঁরা কী সিদ্ধান্ত নেন, তা পর দিন ১৫ তারিখের আগে জানার সম্ভাবনা কম। দীর্ঘ মেয়াদে ভারতের শেয়ার বাজার কোন দিকে যাবে, তা কিছুটা ফেডারেল রিজার্ভের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে বলে ধারণা শেয়ার বাজার মহলের।
অন্য যে-সব বিষয় ভারতের শেয়ার বাজারে গতি আনবে, তার মধ্যে রয়েছে পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি আগামী জুলাই মাস থেকে চালু হওয়ার বিষয়টি প্রায় পাকা হয়ে যাওয়া। এই আইনটি চালু হওয়ার জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই অপেক্ষা করছে বাজার।