—প্রতীকী চিত্র।
বহু দিন ধরে জোগান কমিয়ে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়াতে মরিয়া জ্বালানিটির উৎপাদক এবং রফতানিকারী দেশগুলি। তাতে কিছু দিন আগে দাম ব্যারেলে ৮০ ডলার পেরিয়েছিল। তবে এখন ফের নেমেছে ৭৬-৭৮ ডলারে। সূত্রের দাবি, এতে ভারতের তেল আমদানির খরচ কমেছে। বৃহস্পতিবার যেমন ‘ভারতীয় বাস্কেট’-এর অশোধিত তেল ছিল ৭৬.১২ ডলার। যে কারণে দেশে আবার পেট্রল-ডিজ়েলের দাম কমানোর দাবি উঠছে। অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, ভূ-রাজনৈতিক জটিলতায় অস্থির বিশ্ব বাজারে তেল ওঠানামা করবে। তার ফাঁকে সুযোগ পেলেই দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম কমানো হোক। এতে খাদ্যপণ্যের দাম কমানো যাবে কিছুটা। যা সুদ কমানোর পথ চওড়া করবে। আমদানি খরচ বাড়লে দাম বাড়ানোর রাস্তাও খোলা রয়েছে।
যদিও অনেকেই মনে করাচ্ছেন, গত বছর বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমা সত্ত্বেও, দেশে চড়া দরে পেট্রল-ডিজ়েল বিক্রি করে বিপুল মুনাফা করে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। কিন্তু আমদানি খরচ কমার সুবিধা সাধারণ মানুষের ঘর পর্যন্ত পৌঁছয়নি। উল্টে তেল ও সরকারি মহলের যুক্তি ছিল, তার আগের বছরের আমদানি খাতে হওয়া ক্ষতি খরচ পুষিয়ে নেওয়ার পরে কমতে পারে দাম। সেটা কবে, সেই ইঙ্গিত অবশ্য দেওয়া হয়নি। লোকসভা ভোটের আগে পেট্রল-ডিজ়েলের লিটারে ২ টাকা দাম কমানো ছাড়া কোনও সুবিধা মেলেনি এখনও। ফলে দেশে তেলের দর এখনও চড়ে। কলকাতায় লিটার পিছু পেট্রল এখন ১০৪.৯৫ টাকা আর ডিজ়েল ৯১.৭৬ টাকা। হালে মাথা নামাতে থাকা অশোধিত তেল তাই নতুন করে প্রত্যাশা তৈরি করছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের। বিশেষ করে সামনেই যেহেতু বেশ কিছু রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন।
শুক্রবার অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরী বলেন, “বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমলেও ভারতের খুচরো বাজারে জ্বালানি সস্তা হয় না। এর প্রধান কারণ রাজ্য ও কেন্দ্র, কেউই নিজের রাজস্ব হারাতে চায় না। তারা যে সব জনমোহিনী প্রকল্প চালায়, তার জন্য হাতে টাকার প্রয়োজন। তাই সেই পথে হাঁটে না। ফলে দামও কমে না।” তাঁর দাবি, অবিলম্বে পেট্রোপণ্যকে জিএসটির আওতায় আনা উচিত। তা হলে আমজনতার কিছুটা সুরাহা হতে পারে। এই প্রসঙ্গে অজিতাভ ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেট্রোপণ্যের আলাদা আলাদা দাম (ডিফারেন্সিয়াল প্রাইস) নির্ধারণেরও পরামর্শ দিয়েছেন সরকারকে। যেমন, পণ্য পরিবহণে বা ট্র্যাক্টরে ব্যবহৃত ডিজ়েলের দাম একটু কম হলে মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে সুবিধা হবে। গণ-পরিবহণের ক্ষেত্রেও তা-ই। তুলনায় ওই একই জ্বালানির দাম একটু বেশি রাখা যায় ব্যক্তিগত গাড়িতে ভরার জন্য বিকোলে।
রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, খুচরো দাম নিয়ে সিদ্ধান্ত তিন বিপণন সংস্থা একযোগে নেয়। তেলের দর বিনিয়ন্ত্রণের কারণে
সরকারি ভাবে না হলেও, কেন্দ্রের থেকে সবুজ সঙ্কেত না পেলে দাম বদল সম্ভব নয় বলেই সূত্রের দাবি।