গৃহবধূ থেকে উদ্যোগপতি হয়ে ওঠার পথ দেখাচ্ছে ই-কমার্স

‘হাউজওয়াইফ’ থেকে ‘অন্ত্রপ্রেনর’। গৃহবধূ থেকে উদ্যোগপতি। শাড়ি, গয়না, হস্তশিল্প, পর্যটন থেকে শুরু করে হরেক খাবার, সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় টুকিটাকি। হেঁসেল সামলেও শুধু প্রযুক্তির ডানায় ভর করে নিজের শহর, এমনকী দেশের বেড়া টপকে বিদেশি ক্রেতার কাছেও পৌঁছে যাচ্ছেন অনেক গৃহবধূ। সৌজন্যে ই-কমার্স।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৪২
Share:

‘হাউজওয়াইফ’ থেকে ‘অন্ত্রপ্রেনর’। গৃহবধূ থেকে উদ্যোগপতি।

Advertisement

শাড়ি, গয়না, হস্তশিল্প, পর্যটন থেকে শুরু করে হরেক খাবার, সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় টুকিটাকি। হেঁসেল সামলেও শুধু প্রযুক্তির ডানায় ভর করে নিজের শহর, এমনকী দেশের বেড়া টপকে বিদেশি ক্রেতার কাছেও পৌঁছে যাচ্ছেন অনেক গৃহবধূ। সৌজন্যে ই-কমার্স।

সৃজনশীলতা বা ব্যবসা করার ইচ্ছা হয়তো বরাবরই ছিল। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সময় ও সুযোগ। সংসার-সন্তান সামাল দিয়ে বাড়ির বাইরে লম্বা সময় দেওয়া মুশকিল। ফলে ‘দোকান দেওয়া’র স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গিয়েছে। কিন্তু নেট দুনিয়ায় এ সব হ্যাপা নেই। বাড়ির চৌকাঠ না-পেরিয়েও ব্যবসা তৈরির সুযোগ আছে এখানে। হাতিয়ার নেটে পণ্য বেচা। যার পোশাকি নাম ই-কমার্স।

Advertisement

যেমন, পঞ্চাশোর্ধ সুতপা চৌধুরী। নিজের কিছু করার স্বপ্ন বহুদিনের। কিন্তু সংসার-সন্তান সামলে তা হয়ে ওঠেনি। এখন বাড়ির দায়িত্ব কমেছে। অন্য দিকে খুলেছে নেট দুনিয়ার দরজা। মেয়ে সুমন্তিকার হাত ধরে সেই দরজা দিয়েই নতুন দুনিয়ায় ঢুকে পড়েছেন সুতপাদেবী। চালু করেছেন কসমেটিক জুয়েলারির ব্র্যান্ড ‘অরা’। সুতপাদেবীর দাবি, মাসে হাজার দশেক টাকার ব্যবসা হচ্ছে।

এমনিতে ব্যবসা শুরুর আর এক বাধা পুঁজিও। দোকানের ভাড়া রয়েছে। কর্মচারীর বেতন রয়েছে। সব মিলিয়ে আর্থিক ঝুঁকির পরিমাণ অনেকটাই বেশি ওই সত্যিকারের দোকান খুললে। কিন্তু নেট দুনিয়ায় তা নেই বললেই চলে। মূলত কম পুঁজির টানেই অনলাইন ব্যবসায় পা রেখেছেন দেবমিত্রা ভট্টাচার্য। পনেরো হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে মাত্র ছ’ মাসেই তাঁর ব্র্যান্ড ‘এথনিক শাড়ি ঘরানা’র ব্যবসা ৩ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে।

সুতপা বা দেবমিত্রাদেবীর মতো আরও অসংখ্য গল্প ছড়িয়ে রয়েছে ফেসবুকের ‘দেওয়ালে’, হোয়াটসঅ্যাপের বার্তায়। আর এই নতুন প্রজন্মের বিক্রেতাদের রমরমা উঠে এসেছে ই-কমার্সের রথী-মহারথীদের বিক্রেতার তালিকাতেও। ফ্লিপকার্টের অন্যতম কর্তা অঙ্কিত নাগোরির দাবি, তাঁর সংস্থার বিক্রেতাদের তালিকার ২০% দখল করেছেন মহিলা। এঁদের একটা বড় অংশ আগে ক্রেতা ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘নেট বাজারে পছন্দসই পণ্য না পাওয়ায় বাজারের খামতি ধরতে পেরেছেন এঁরা। অসুবিধা হয়নি বাজার ধরতেও।’’

বাজার যে রকেটগতিতে বাড়ছে, তা পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। শুধু বড় শহর নয়, প্রায় ৫০% ব্যবসা দিচ্ছে ছোট ও মাঝারি শহর। সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের দাবি, এই বাড়বাড়ন্তের অন্যতম কারণ ছোট শহরে ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা। এমন কি নেট বাজারের আওতায় ঢুকে পড়ছে বর্ধিষ্ণু গ্রামগুলিও। প্রায় ৯% ব্যবসা জোগাচ্ছে গ্রামাঞ্চল।

আর এই ক্রমশ বাড়তে থাকা বাজারে ব্যবসার সুযোগও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাড়িতে বসে দেশ-বিদেশের বাজারে নিজের পণ্য পাঠানোর সুযোগ হাতছাড়া করছেন না ‘কল্কা’ ব্র্যান্ডের অন্যতম মাথা কাকলি বসু। তিনি বলেন, ‘‘শহরে শহরে দোকান খোলা সম্ভব নয়। অনলাইনে ভিন্‌ রাজ্য, বিদেশের বাজারেও পৌঁছনো যায় সহজে।’’

প্রথাগত ব্যবসার প্রতিকূলতাই ই-কমার্সের বড় পুঁজি। ই-বের অন্যতম কর্তা নবীন মিস্ত্রির দাবি, সহজে ব্যবসা শুরু করার সুযোগ দিয়েই ই-কমার্সের রমরমা। তিনি জানান, সংস্থার ছাতার তলায় রয়েছেন ৬৫ হাজার বিক্রেতা। তালিকার উপর দিকেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এ রাজ্যে বিক্রেতার সংখ্যা ৫০% হারে বাড়ছে বলে তাঁর দাবি। যাদের সিংহভাগ মহিলাদের দখলে।

এত দিন ভারতে ব্যবসা শুরুকে মহিলাদের সাফল্য সীমিত ছিল মূলত চাকরি ছেড়ে ব্যবসা করতে আসা দক্ষ কর্মীদের মধ্যেই। যেমন অ্যামাজনের প্রাক্তন কর্মী নিরু শর্মা শুরু করেছেন অনলাইন শপিং পোর্টাল ইনফিবিম। স্পেন্সার্সের প্রাক্তন কর্মী রিচা কর মহিলাদের অনলাইন অন্তর্বাস সংস্থা জিভামে চালু করেছেন। রয়েছেন যাত্রা ডট কমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সাবিনা চোপরাও। এ বার এই তালিকায় যুক্ত হতে শুরু করেছেন গৃহকত্রীরাও।

তবে অনলাইন ব্যবসাতেও বাড়ছে প্রতিযোগিতা। রয়েছে মাত্রাছাড়া ছাড় দেওয়ার প্রবণতা। বিশেষজ্ঞ সংস্থা বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে জাতীয় আয়ের মোট ৫% দখল করবে এই ব্যবসা। অনলাইন ব্যবসার উপর সমীক্ষা চালিয়ে ইটেলিং ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ২০১৩ সালের তুলনায় এই ব্যবসা ৬০% বেড়েছে। ২০১৪ সালে প্রায় ১৩০০ কোটি ডলার ব্যবসা করেছে নেট দুনিয়া। চলতি বছরেও তা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement