নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত দেশের অর্থনীতি।
চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে বিভিন্ন সংস্থার ফল একে একে প্রকাশ হচ্ছে। অর্থনীতির অস্বস্তি বাড়িয়ে স্পষ্ট হচ্ছে চাহিদার পতনের ছবিটাও। চাহিদা কমায় উৎপাদন ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। কর্মসংস্থানের উপরে যার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আবার শিল্পে নতুন লগ্নি তেমন না হওয়ায় তৈরি হচ্ছে না নতুন কাজ। বৃষ্টি কম হওয়ায় সমস্যায় কৃষিও। সব মিলিয়ে অর্থনীতির উপরে চাপ বাড়ছে। এই অবস্থায় ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটাই করেছে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (আইএমএফ)। এ সবের ধাক্কা আবার পড়েছে শেয়ার বাজারের উপরে। এই বহুমুখী চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে কেন্দ্র কী পদক্ষেপ করে সেটাই এখন দেখার।
গত শুক্রবার ত্রৈমাসিকের ফল প্রকাশ করেছে দেশের বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা মারুতি সুজুকি। দেশের মধ্যে তাদের গাড়ির বিক্রি এক বছর আগের তুলনায় প্রায় ১৯.৩% কমেছে। বিপুল কমেছে নিট মুনাফা। অন্যান্য গাড়ি সংস্থাগুলির বিক্রির হালও তথৈবচ। গাড়ি বিক্রি এবং উৎপাদন কমায় চাপ বাড়ছে যন্ত্রাংশ শিল্পের। সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে শিল্পের বক্তব্য, অবিলম্বে চাহিদার উন্নতি না হলে আগামী দিনে ১০ লক্ষ কর্মী কাজ হারাতে পারেন। বস্তুত, চাহিদার পতনের জেরে ভারতে ১,৭১০ জন কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপানি গাড়ি নির্মাতা নিসান।
সমস্যার খতিয়ান
• চাহিদায় ধাক্কার ছবি স্পষ্ট।
• গাড়ি বিক্রি কমেছে বিভিন্ন সংস্থার।
• উৎপাদন ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে অনেকে।
• ফলে চাপে ইস্পাত, টায়ার, যন্ত্রাংশ, রং-সহ কিছু শিল্প।
• তৈরি হয়েছে কাজ হারানোর আশঙ্কা।
• সমস্যায় ভোগ্যপণ্য শিল্পও।
আরও সমস্যা
• বৃষ্টির খামখেয়ালিপনায় চাপে কৃষিও।
• চলতি বছরে ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটাই করেছে আইএমএফ।
• সব মিলিয়ে বিরূপ প্রভাব পড়েছে শেয়ার বাজারে।
• বাজেট ঘোষণার পর থেকে ২,০০০-এর বেশি পয়েন্ট খুইয়েছে সেনসেক্স।
রুপোলি রেখা
• মুনাফায় ফিরেছে পিএনবি। লাভ হয়েছে আরও কয়েকটি ব্যাঙ্কের।
• সরকারি বন্ডের ইল্ড কমায় বন্ড ফান্ডগুলির অবস্থা তুলনায় কিছুটা ভাল।
• সোনা এখনও বেশ তেজি।
অস্বস্তিতে অন্যান্য ক্ষেত্রও। যেমন, মুনাফা বাড়লেও সেই অনুপাতে বিক্রি বাড়েনি ভোগ্যপণ্য নির্মাতা হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের। বিক্রি বেড়েছে মাত্র ৫%, যা আগের সাতটি ত্রৈমাসিকের মধ্যে সবচেয়ে কম।
এরই মধ্যে কিছুটা আশার কথা, অনেক ঝড়-ঝাপটা কাটিয়ে আবার লাভের মুখ দেখেছে রাষ্ট্রায়ত্ত পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (পিএনবি)। এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে ব্যাঙ্কটি ঘরে তুলেছে ১,০১৯ কোটি টাকার নিট মুনাফা। আয় বেড়েছে বেসরকারি আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের। আগের অর্থবর্ষের একই ত্রৈমাসিকে তাদের ১২০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছিল।
অন্য দিকে, দেশের অর্থনীতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ায় ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস ০.৩% ছাঁটাই করে যথাক্রমে ৭ এবং ৭.২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে আইএমএফ। বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা পতনের পাশাপাশি এই পূর্বাভাস ছাঁটাইয়েরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাজারে। গত সপ্তাহে ভাল রকম ধাক্কা খেয়েছে দুই প্রধান সূচক। বাজেট ঘোষণার পর থেকে ২,০০০-এরও বেশি পয়েন্ট খুইয়েছে সেনসেক্স। এর প্রভাব পড়েছে ইকুইটি নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডগুলির উপরে।
তবে ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের ইল্ড ৬.৫২ শতাংশে নামায় বন্ড ফান্ডগুলির অবস্থা তুলনায় ভাল। যদিও সরকারি ঋণপত্রের প্রকৃত আয় এতটা নেমে আসায় ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ আরও কমার আশঙ্কা থাকছেই।
(মতামত ব্যক্তিগত)