খুচরো ও পাইকারি বাজারে যখন মূল্যবৃদ্ধি মাথা তুলছে, তখন সব দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে আরও তুঙ্গে উঠছে শেয়ার বাজার। সেনসেক্স সর্বকালীন উচ্চতায়। মাঝে দু’দিন ৪২ হাজারের ঘরও ছুঁয়ে এসেছে। শেষে অবশ্য নেমে আসে। তবে এই অক্লান্ত উত্থান মোটেও স্বাভাবিক নয়। মূল্যবৃদ্ধির মাথা তুললে সুদ ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা কমে। অথচ ঝিমিয়ে থাকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সুদ কমা জরুরি। এমনকি মূল্যবৃদ্ধিকে বাগে না-রাখতে পারলে দাবি উঠতে পারে সুদ বাড়ানোরও। শিল্প, বাণিজ্য ও শেয়ার বাজারের কাছে এই পরিস্থিতি কাম্য নয়। যে কারণে অতীতে মূল্যবৃদ্ধি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি দেখলেই বহু বার ডিগবাজি খেয়েছে সূচক। অথচ এ বার ঘটছে তার উল্টো।
টানা পাঁচ মাস রফতানি কমা, জিএসটি আদায়ের লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয়, প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহে ধাক্কা, রাজকোষের উপরে চাপ বৃদ্ধি— উদ্বেগ বাড়ার কথা এই সব পরিসংখ্যানেও। কিন্তু কোনও কিছুতেই যেন হেলদোল নেই শেয়ার বাজারের। সূচককে দমিয়ে রাখতে পারছে না অর্থনীতির কোনও খারাপ খবরই।
খুচরো মূল্যবৃদ্ধি যখন সাড়ে পাঁচ বছরে সব চেয়ে বেশি, বাজারে আলু, পেঁয়াজ-সহ আনাজের দাম যখন আগুন, তখন আমানতে ফের সুদ ছেঁটেছে স্টেট ব্যাঙ্ক। ২ কোটি টাকার কম সব দীর্ঘ মেয়াদি আমানতে সুদ কমেছে ১৫ বেসিস পয়েন্ট করে। ফলে এক থেকে ১০ বছর পর্যন্ত মেয়াদের জমায় প্রবীণ নাগরিকেরা পাবেন ৬.৬০% সুদ। অন্যেরা ৬.১০%। সুদ নির্ভর মানুষের পক্ষে এই পরিস্থিতি ‘হজম’ করা বেশ কঠিন।
গত সপ্তাহে সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকের ফল বেরিয়েছে অনেকের। রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের নিট লাভ বেড়েছে ১৩.৫%। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএসের নিট মুনাফা ৮১০৫ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৮১১৮ কোটি টাকা। অনাদায়ী ঋণ বাড়লেও এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা ৩৩% বেড়েছে। তা প্রায় ১২১% বেড়েছে বন্ধন ব্যাঙ্কের। তবে উইপ্রোর নিট লাভ ২.১৭% কমেছে।
আয় বাড়ানোর তাগিদে জিএসটি সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে তা ১.১৫ লক্ষ কোটি টাকা, মার্চে ১.২৫ লক্ষ কোটি। দু’সপ্তাহ পরে পেশ হবে ২০২০-২১ অর্থবর্ষের বাজেট। অর্থনীতির সমস্যা সরকার সেখানে কতটা সামাল দেয়, সেটাই দেখার।
(মতামত ব্যক্তিগত)