প্রতীকী ছবি।
যে পাকা সোনা (২৪ ক্যারাট) দিয়ে গয়না তৈরি হবে, বহু ক্ষেত্রে তাতেই ভেজাল থাকার অভিযোগ উঠছে। গয়না ব্যবসায়ীদের দাবি, এখন হলমার্ক না-থাকলে গয়না বেচা যায় না। অথচ ভেজালের জেরে সেই সোনা দিয়ে তৈরি গয়না হলমার্ক পরীক্ষায় পাশ করতে পারছে না। ফলে তাতে হলমার্কের ছাপ লাগাতে অস্বীকার করেছে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলি। বিশেষত সমস্যা হচ্ছে মফস্সলে ব্যবসা চালাতে। যে কারণে এ বার পাকা সোনাতেও হলমার্ক লাগানোর নিয়ম চালুর দাবি করছেন তাঁরা। আর ব্যবসায়ী-সহ ক্রেতাদের প্রতি পাকা সোনা (বুলিয়ন) ডিলারদের পরামর্শ, পাকা সোনা কেনার সময়ে শুদ্ধতা-সহ সমস্ত নথি ঠিক রয়েছে কি না, যাচাই করে নিন। যাতে পরে সমস্যা হলে অভিযোগ জানানো যায়।
বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারাণ সম্পাদক টগর পোদ্দার বলেন, “২৪ ক্যারাট পাকা সোনার শুদ্ধতার (পিয়োরিটি) নির্দিষ্ট মান থাকে। যাকে বলা হয় ৯৯৫। কিন্তু রানাঘাট-সহ আরও কিছু এলাকার ব্যবসায়ীরা গয়না তৈরির জন্য যে পাকা সোনা কিনছেন, তার মান অনেক ক্ষেত্রেই কম (৯৯২ থেকে ৯৯৪) থাকছে। ওই সোনা দিয়ে তৈরি গয়না হলমার্কিং সেন্টারে পরীক্ষায় পাশ করতে পারছে না। ফলে সমস্যায় পড়ছেন বহু গয়না ব্যবসায়ী। আমাদের দাবি, গয়নার মতো ২৪ ক্যারাট সোনাতেও হলমার্কিংয়ের নিয়ম চালু করুক ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (বিআইএস)।’’
একই অভিযোগ স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি সমর দে-র। তিনি বলেন, “এই কারণে পরীক্ষায় পাশ না-করার বহু নজির রয়েছে। তাই ইতিমধ্যেই বিআইএসের কাছে ২৪ ক্যারাট পাকা সোনায় হলমার্কিং চালুর দাবি করেছি।’’ রানাঘাটের গয়না ব্যবসায়ী চন্দন সরকার বলছেন, “পুরনো গয়না কিনে তা গলিয়েও অনেক বুলিয়ন ব্যবসায়ী পাকা সোনা বেচেন। সেগুলিতেও হলমার্ক বাধ্যতামূলক করা জরুরি।’’
এই পরিস্থিতিতে অবশ্য গয়না তৈরির আগে পাকা সোনাই নির্দিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচাইয়ের পরামর্শ দিয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল বুলিয়ন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দীনেশ খাবরা। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ সত্যি কি না, প্রমাণ হওয়া জরুরি। রাজ্যে বহু সোনা যাচাইয়ের পরীক্ষাগার আছে। গয়না তৈরির আগে কম খরচেই পাকা সোনা পরীক্ষা করাতে পারেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ভেজাল ধরা পড়লে বিআইএস-সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। তা না-করে শুধু পাকা সোনার বিক্রেতাদের উপর দায় চাপালে চলবে না।’’
পাকা সোনা পরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে সমরবাবুও বলেন, বৌবাজারে তাঁদের সংগঠনের পরিষেবা কেন্দ্রে এই সুবিধা মেলে। আর বিআইএসের কলকাতা দফতরের কর্তা এ কে চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “এখন শুধু নতুন তৈরি গয়নাতেই হলমার্কিং-এর নিয়ম চালু আছে। পাকা সোনায় তা করা হবে কি না, তা ঠিক করবে বিআইএসের কেন্দ্রীয় দফতর। লিখিত প্রস্তাব এলে তা বিবেচনার জন্য সেখানে পাঠাতে পারি।’’
ক্রেতারা যাতে এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় না-পড়েন, সে জন্য নথি ঠিক রয়েছে কি না, দেখে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বুলিয়ন ডিলার তথা অ্যাসোসিয়েশন অব গোল্ড রিফাইনারিজ় অ্যান্ড মিন্টসের সাধারণ সম্পাদক হর্ষদ অজমেঢ়া। তাঁর বক্তব্য, পাকা সোনা কেনার ইনভয়েসে শোধনাগারের (রিফাইনারি) নাম এবং বাঁট নম্বর থাকা চাই। নিতে হবে শুদ্ধতার সার্টিফিকেটও। পরে ভেজাল ধরা পড়লে ওই সব নথির ভিত্তিতে বিআইএসে অভিযোগ দায়ের করে সুরাহা পাওয়া সম্ভব।