মুখোমুখি: জিএসটি পরিষদে অরুণ জেটলি। শনিবার হায়দরাবাদে। পিটিআই
ব্যবসায়ীদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে জুলাই মাসের জন্য পণ্য-পরিষেবা করের রিটার্ন জমার দিন পিছিয়ে দিল জিএসটি পরিষদ। একই সঙ্গে, বিভিন্ন রাজ্য ও ব্যবসায়ীমহলের দাবিদাওয়া মাথায় রেখে কম-বেশি ৩০টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে করের হার কমানোর কথাও ঘোষণা করল তারা।
শনিবার এক ধাক্কায় সেস ১০ শতাংশ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছিল গাড়ি শিল্প। কিন্তু শেষমেশ সেস বেড়েছে তার তুলনায় কম। যদিও তাতে অখুশি গাড়ি শিল্প।
পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের দাবি, জিএসটি পরিষদের এ দিনের বৈঠকে বড় জয় ছিনিয়ে এনেছে পশ্চিমবঙ্গ। কারণ, মূলত এ রাজ্যের দাবি মেনে বছরে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যবসা করা হস্তশিল্পী ও লোকশিল্পীদের জিএসটি-র আওতার বাইরে রাখার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, পণ্য-পরিষেবা করের নথিভুক্তি তাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। উল্লেখ্য, এত দিন কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এক রাজ্য থেকে আর এক রাজ্যে ব্যবসা করলে এই নথিভুক্তি করতেই হত। তা সে ব্যবসা ২০ লক্ষের নীচে হলেও।
মাটির প্রতিমায় জিএসটি-র হার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে শূন্য। পুজোর মুখে এতে প্রতিমাশিল্পীদের অনেকখানি সুবিধা হওয়ার কথা। সেই কারণে একেও রাজ্যের দাবি আদায়ের জয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অমিতবাবু।
মাসের রিটার্ন জমার জন্য সময় বাড়াল পরিষদ। নতুন শেষ তারিখ—
• জিএসটিআর-১: ১০ অক্টোবর*
• জিএসটিআর-২: ৩১ অক্টোবর
• জিএসটিআর-৩: ১০ নভেম্বর
* নথিভুক্ত কারও ব্যবসা ১০০ কোটি টাকার উপরে হলে, এই দিন ৩ অক্টোবর
** জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকের রিটার্ন (জিএসটিআর-৪) জমার শেষ তারিখ ১৮ অক্টোবর (অপরিবর্তিত)
এ দিন জিএসটি পরিষদের ২১তম বৈঠক বসেছিল হায়দরাবাদে। সেখানে এবং তার আগে সাংবাদিকদের সামনে জিএসটি ও তার রিটার্ন জমা দিতে গিয়ে হয়রান হওয়ার কথা বলছিলেন অমিতবাবু-সহ বিভিন্ন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী। তাঁদের বক্তব্য, প্রথম বার পণ্য-পরিষেবা কর ও তার রিটার্ন জমা দিতে গিয়ে হয়রান হতে হয়েছে শিল্পকে। অনেক ক্ষেত্রেই মুখ থুবড়ে পড়েছে তার তথ্যপ্রযুক্তি-পরিকাঠামো (জিএসটি নেটওয়ার্ক বা জিএসটিএন)। গত বার নেট মারফত ওই কাজ সারতে গিয়ে কী ধরনের অসুবিধার মুখে পড়তে হয়েছিল, তা তুলে ধরেন তাঁরা। জানান, কী ভাবে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট অনেক সময় কাজই করেননি। আলোচনা শেষে সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি অবশ্য জানান, জুলাইয়ের জন্য জিএসটির রিটার্ন জমার সময় বাড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁরা।
•বছরে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যবসা করা হস্তশিল্পী, কারিগর ও লোকশিল্পীরা জিএসটি-র বাইরে। বাধ্যতামূলক নয় নথিভুক্তিও
• জিএসটি বসবে না মাটির প্রতিমায়
• কেভিআইসি বিপণির মাধ্যমে বিক্রি হওয়া খাদি জিএসটিমুক্ত
• গত ১৫মে পর্যন্ত ট্রেডমার্ক নথিভুক্ত থাকলেই, জিএসটি দিতে হবে ৫%
জেটলি জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের সুবিধার কথা ভেবে এ দিন বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীতে করের বোঝা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। যার মধ্যে রয়েছে ইডলি, দোসা, রেনকোট, রাবার ব্যান্ড ইত্যাদি। খাদি অ্যান্ড ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রিজ কমিশনের (কেভিআইসি) মাধ্যমে বিক্রি হওয়া খাদিকে ছাড়ই দেওয়া হবে জিএসটি থেকে। তাঁর দাবি, গাড়িতে সেস বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু তা সত্ত্বেও করের হার দাঁড়াবে জিএসটি জমানার আগের থেকে কম।
• করের হার কমছে প্লাস্টিক রেনকোট, রান্নার গ্যাস লাইটার, ধুপ, রাবার ব্যান্ড, কম্পিউটার মনিটর, ঝাঁটা, ব্রাশের মতো নানা পণ্যে
• করের উপর চাপানো
সেস অবশ্য বেড়েছে মাঝারি ও বড় গাড়ি আর এসইউভি-র ক্ষেত্রে
ব্র্যান্ড ছাড়া খাদ্যপণ্য বিক্রি করলে, তাতে জিএসটি লাগে না। কিন্তু ব্র্যান্ডেড হলে গুনতে হয় কর। অভিযোগ উঠছিল যে, অনেক সংস্থা তা এড়াতে সেই ব্র্যান্ডনাম নথিভুক্তি বাতিল করছিল। এ দিন পরিষদ জানিয়েছে, গত ১৫মে পর্যন্ত ব্র্যান্ডনাম নথিভুক্তি থাকলেই, ৫ শতাংশ জিএসটি গুনতে হবে তাদের।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দাবি, সব মিলিয়ে শুরুতেই জিএসটি আদায়ে সাফল্য বেশ চোখে পড়ার মতো। জমা পড়েছে ৯৫,০০০ কোটি টাকার কর জমার রিটার্ন। কর দিয়েছেন করযোগ্যদের ৭০ শতাংশ।