২০২০ সালের মে মাসে দুই রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলায় আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আমপান। ফাইল চিত্র।
ঘরবাড়ি নতুন করে গড়ে তুলতে গিয়ে করতে হয়েছিল ধার। সেই টাকা জোগাতে গিয়ে টান পড়েছিল খাবারে। রুজিরুটির জন্য ঘর ছাড়তে হয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষকে। তিন বছর আগে ঘূর্ণিঝড় আমপান পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলির অর্থনীতিতে এমনই বড়সড় প্রভাব ফেলেছিল বলে জানাল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক রিপোর্ট।
গত কয়েকদিন ধরেই ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ নিয়ে উদ্বেগে দিন গুনছেন রাজ্যের মানুষ। এর আগে কখনও আয়েলা, কখনও আমপান, কখনও ইয়াস বা ফণী রাজ্যের মানুষকে উদ্বেগে ফেলেছে। শীর্ষ ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে তার তীব্রতা। পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা পূর্ব উপকূলেই গত ছ’দশকে (১৯৬১-২০২২) ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা তার আগের ছ’দশকের থেকে বেশি। যার ধ্বংসলীলা ধাক্কা দিচ্ছে মানুষের রুজিরুটি তথা অর্থনীতিতে।
ঘূর্ণিঝড় কী ভাবে অর্থনীতিতে আঘাত হানছে, তা বোঝাতে সম্প্রতি প্রকাশিত ‘রিপোর্ট অন কারেন্সি অ্যান্ড ফিনান্স ২০২২-২৩: টুওয়ার্ডস এ গ্রিনার ক্লিনার ইন্ডিয়া’ শীর্ষক রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় তিন বছর আগে আমপানের প্রভাবকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছে আরবিআই। ২০২০ সালের মে মাসে দুই রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলায় যা আছড়ে পড়েছিল। কোভিডের আতঙ্কের মধ্যেই তাণ্ডব চালিয়েছিল এ রাজ্যের কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলিতে। যার জেরে ঘরছাড়া হন প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বিশ্লেষণ বলছে, ওই ঝড়ের পরে বেড়ে গিয়েছিল জেলার বাসিন্দাদের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ। মেরামত, পুনর্বাসনের কাজে গৃহস্থের সঙ্গে খরচ করতে হয় বেসরকারি সংস্থাগুলিকেও। সেই খরচের টাকা এসেছিল হয় সঞ্চয় থেকে অথবা ধার করে।
রিপোর্ট জানাচ্ছে, নির্দিষ্ট জেলা ধরে দেখে বোঝা গিয়েছে পুঁজির অনেকটাই বাড়িঘর মেরামতে যাওয়ায় খরচ কমেছিল খাবারের পিছনে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তার জন্য ভরসা করতে হয়েছিল ঋণ বা সরকারি ক্ষতিপূরণে। তার উপরে বহু মানুষ রোজগারের খোঁজে অন্যত্র চলে যাওয়ায় প্রভাবিত জেলাগুলিতে চাহিদা ধাক্কা খায় একশো দিনের কাজের। শীর্ষ ব্যাঙ্কের আশঙ্কা, এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা বাড়লে প্রভাবিত এলাকায় আমজনতার সঙ্গেই দেনার বোঝা বাড়তে পারে বেসরকারি শিল্পের ঘাড়েও। যা কিনা সামগ্রিক ভাবে ধাক্কা দিতে পারে দেশের অর্থনীতিকে।